Skip to main content

জীবন কী? একবিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষিতে



জীবন কী
একবিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষিতে
সরওয়ার কামাল
আমরা মানুষ। আমরা মননশীল প্রাণী। প্রাণী হিসেবে অন্যান্য জীবের মতই আমাদের জীবন আছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা জীবন যাপন করি। জীবন আসলে কী এটা বুঝার জন্য আমাদের সচেতন প্রচেষ্টা আছে। জন্ম-মৃত্যু,বৃদ্ধি-ক্ষয়, ভাঙ্গন-গড়ন,সচল-অচল নানা আঙ্গিকে-অবয়বেই আমরা জীবনকে উপলব্দি করি। বস্তুজগতের অজস্র উপাদানের মাঝে প্রাণ ও জীবনকে তার স্বরূপে উপলব্ধি করার নানান তরিকাও  আছে। আবার এই প্রাণ ও জীবনের উৎস হিসেবে আধ্যাত্মিক সত্ত্বার খোঁজ নিই। কখনো বিজ্ঞান, কখনো দর্শন ও কখনো ধর্ম আমাদের অতৃপ্ত জিজ্ঞাসার বাহাস ও জবাব আকারে হাজির হয়। আমাদের প্রতিটি নতুন জ্ঞান পুরাতনকে মিথ্যা করে দেয়। আজকের জ্ঞান কাল না হতেই পরিণত হয় কুসংস্কারে। কারণ বিজ্ঞানের প্রতিটি নতুন আবিষ্কার, দর্শনের প্রতিটি নতুন ধারণা কিংবা ধর্মের নতুন ব্যাখ্যা আমাদের পূর্ববর্তী বিশ্বাসকে ভেঙ্গে দেয়। কিন্তু পুরাতন বিশ্বাসকে ঝেড়ে ফেলার ঝুঁকি নেয়া ও নতুন বিশ্বাসকে গ্রহণ করার  সাহস সবার থাকে না। তাই কেউ পুরাতনকে আঁকড়ে পড়ে থাকে আবার কেউ নতুন জ্ঞান সৃষ্টির অভিযানে শামিল হয়। নতুন জ্ঞানের পরিধিতে, নির্ভরযোগ্য মানদণ্ডের নিরিখে, পুরাতন বিশ্বাসকে বিচার করতে না পারলে পুরাতনের সাথে আমাদের লেনদেন চুকে না। একইভাবে অবিরাম চর্চার মাধ্যমে জানা শোনার জ্ঞানকাণ্ডে সম্পৃক্ত না থাকলে নতুন জ্ঞানকে আয়ত্ব করার সক্ষমতাও তৈরি হয় না। ঠিক এই জায়গায় জীবন সম্পর্কিত হাজার বছরের পুরাতন প্রশ্নের নতুন জবাব শুনার একটি নিরেট যৌক্তিকতা আছে।          
এখন থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে গ্রীক দার্শনিক পিথাগোরাস ধারণা করেছিলেন যে এই জীবন-জগতের পরম সত্ত্বার স্বরূপ হল সংখ্যা। থেলিস মনে করেছিলেন পানি, এনাক্সিমিনডার মনে করেছিলে অসীম গতিশীল বস্তু, এনাক্সিমিনেস মনে করেছিলেন বাতাস, হিরাক্লিটাস মনে করেছিলেন আগুন, এবং এম্পিডক্লিস মনে করেছিলেন মাটি, পানি, বায়ু ও আগুন এই চারটি সৃষ্টির মূল উপাদান। জ্ঞানের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা ও পদ্ধতিগত পরিশোধনের বিভিন্ন পর্যায়ে এই বিশ্বাস টেকে নি। তবে পিথাগোরাসের বক্তব্য নিয়ে নতুন করে ভাববার অবকাশ আছে। সে কথায় পরে আসছি।
বিভিন্ন ধর্মে পরম সত্ত্বাকে আত্মা হিসেবে বা চেতনা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। জগতকে সে আত্মা বা চেতনার একটি দৃশ্যমান প্রকাশ হিসেবে ভাবা হয়। এই পরমাত্মাকে ঈশ্বর, ব্রহ্মা বা খাঁটি ও আসল জগত হিসেবে স্বীকার করা হয়। সে মোতাবেক এই ঈশ্বরই জীবন তৈরি করেছেন কিংবা আসল জগতেরই একটি নকল ফর্মা হিসেবে জীবনের অস্থিত্ব আছে। সরল কথায় একটি বস্তুগত শরীরে আত্মার উপস্থিতিই জীবন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে আত্মা কি আর শরীরেরইবা বস্তুগত স্বরূপ কি? বস্তুগত জ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ও নতুন আবিস্কার এক্ষেত্রে জীবন ব্যাখ্যার উপায় হতে পারে।
 আমরা যেটাকে বলি শরীর, এটা অনেকগুলো অঙ্গ, তন্ত্র, কলা ও কোষ দ্বারা তৈরি। শরীরের এই সমস্ত উপাদান যখন সচল থাকে, সক্ষম থাকে, তাকে আমরা জীবন বলি। কিন্তু জীবন হচ্ছে একটি গতিশীল পুনরাবৃত্তিমূলক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ আমাদের শরীরে প্রতিমুহূর্তে কোষের ভাঙ্গাগড়া চলছে। ডিএনএ ছাড়া কোষগুলো খুব দ্রুত মরে যায়। প্রতিদিন আমাদের শরীরের ত্বক থেকেই অন্তত পাঁচশত মিলিয়ন মরা কোষ ঝরে পড়ে। প্রতি দশটি রক্ত কণিকার মধ্যে পাঁচটি প্রতিদিনই মারা যায়এ থেকে বুঝা যায় একইভাবে নতুন কোষ তৈরি না হলে আমরা মারা যাব। কথা হচ্ছে স্বাভাবিক কোষ কিভাবে মারা যায় আর নতুন কোষইবা কিভাবে তৈরি হয় তা না বুঝলে এই মেটাবোলিজম স্পষ্ট হবে না। স্বাভাবিক ভাবে কোষের মরণ একটি বহুমুখী জটিল প্রক্রিয়া। গ্রীক ভাষায় এটাকে ‘’এপথসিস’’ বলা হয় যার মানে হল গাছের/ ফুলের পাপড়ি বা পাতা ঝরে যাওয়া। এই প্রক্রিয়াটাও বিভিন্নভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে মোটাদাগে বলা যায়, প্রথমে কোষের নিউক্লিয়াস ঘনীভূত হয়, কোষ কুঁচকে যায়, সাইটোপ্লাসম ঘনীভূত হয়, ডিএনএ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়,শেষে নিউক্লিয়াস কিছু বিচ্ছিন্ন ক্রোমাটিন বা নিউক্লিওসমাল ইউনিটে বিভক্ত হয়ে কোষের মৃত্যু ঘটে। পুরো প্রক্রিয়াটাকে কিছু জৈবরাসায়নিক পরিবর্তন হিসেবে সনাক্ত করা যায়। অন্যদিকে কোষ তৈরি হয় কোষ বিভাজনের মাধ্যমে।একটি কোষ দুইভাবে বিভক্ত হয়ে নতুন কোষ তৈরি করে। ঠিক বিভাজনের আগে কোষে যে তেইশ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে তাতে ছয় হাজার মিলিয়নের মত ডিএনএ কোড কপি হয়ে যায়। ডিএনএ হল প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা। ফলে প্রত্যেকটি নতুন কোষে সমপরিমান ডিএনএ কোড বরাদ্ধ হয়ে যায়। এই যে কোষের বৃদ্ধি এবং মৃত্যু তা একটি চক্রক প্রক্রিয়া যা ঐ প্রক্রিয়াতেই উৎপন্ন হওয়া এক ধরণের প্রোটিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আর প্রোটিন হল শৃঙ্খল আকারে যুক্ত এমাইনো এসিডের ব্লক। জীবন কি বুঝাতে গিয়ে আমি যে জৈব-রাসায়নিক আলোচনার সূত্রপাত করলাম তার কারণ আমরা জীবন শুরু করেছি একটি একক কোষ হিসেবে। বাবা থেকে অর্ধেক আর মা থেকে অর্ধেক জীন নিয়ে। জীনের মুল উপাদান হল ডিএনএ। সে কারণে আমাদের শরীরের পুরো পরিকল্পনা নির্দেশনা আকারে লিপিবদ্ধ আছে এই জীনে।
এবার জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন চিন্তাবিদদের প্রামাণ্য তৎপরতার হদিস নেয়া যাক। ১৯৪৩ সালে ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে এরুইন শ্রয়েডিংগার ‘’জীবন কী’’ শিরোনামে একটি ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে তিনি খুব দূরদর্শী কিছু ধারণা ব্যক্ত করেন। তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে, জীবন্ত কোষের রাসায়নিক কাঠামোতে বংশগত তথ্য, কোড আকারে লুকায়িত থাকতে পারে। তার সে ইঙ্গিত দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ক্রিক এবং ওয়াটসন ১৯৫৩ সালে ডিএনএ কাঠামো আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানী শ্রুয়েডিঙ্গারের সত্তর বছরেরও পরে একই শিরোনামে গত ১২ জুলাই ট্রিনিটি কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে ক্রেইগ ভ্যানটার একটি ভাষণ দেন। তিনি বলেন এখন ডিএনএর জেনেটিক কোড পাঠ করা সম্ভব। প্রোটিন সংশ্লেষের মাধ্যমে নতুন ডিএনএ কোড লেখাও সম্ভব। শুধু তাই নয় পুরো জীন তৈরি করে নতুন কোষে পুরে দেয়াও সম্ভব। এর তাৎপর্য কী দাঁড়াল ? জীবন শুরুর যে মৌলিক উপাদান কোষ, কৃত্রিমভাবে তা তৈরি করা সম্ভব। ক্রেইগ বলেন, আমরা এখন জীববিজ্ঞানের ডিজিটাল যুগে আছি। অর্থাৎ কম্পিউটারের সফটওয়্যার ও প্রোগ্রামিং যেরকম ডিজিটাল কম্যান্ড ১ ও ০ দ্বারা লেখা সম্ভব, ডিএনএ কোডও সে রকম ডিজিটাল কম্যান্ড দ্বারা লেখা সম্ভব হবে। শ্রুয়েডিঙ্গার বলেছিলেন জীবন হচ্ছে এক ধরণের কোড, আর ক্রেইগ ভ্যানটার এসে বলছেন জীবন হচ্ছে ডিজিটাল কোড। পিথাগোরাসের কথার একটা প্রতিধ্বনি যেন আধুনিক যুগে ফিরে আসল।  
১৯৪৯ সালে ফ্রেড স্যাঙ্গার যখন ইনসুলিন নামক প্রোটিন এর এমাইনো এসিড কোডের ধারা বিন্যাস আবিস্কার করেন, তখন এটা অনেকটা পরিস্কার হয়েছিল যে ডিএনএ এর কপি তৈরি করা সম্ভব এবং তা প্যাঁচানো দ্বৈত কয়েলের মতই। ১৯৬১ সালে গোবিন্দ খোরানা এবং মার্শাল নিরেনবারগ তিন বর্ণ বিশিষ্ট রৈখিক জেনেটিক কোড আবিষ্কার করেন, যেখানে প্রতিটি বর্ণ একেকটি এমাইন এসিডের আদ্যাক্ষর হিসেবে বিবেচিত।১৯৭০ সালে হ্যাম স্মিথ রেস্ত্রিকশন এনজাইম আবিস্কার করেন। এটা আণুবীক্ষণিক কাঁচির ভূমিকা পালন করে যার সাহায্যে আণুবীক্ষণিক পর্যায়ের জৈবপ্রযুক্তিতে বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৭৫ সালে ভ্যানটার যখন পিএইচডি গবেষণায় লিপ্ত তখন ডিএনএ কে তিনিও এনালগ কোড হিসেবে ভাবতেন। কিন্তু যেই না ডিএনএর ধারাক্রম তৈরি সম্ভব হল, এই ডিএনএ কোডকে ডিজিটাল কোডে রূপান্তর করার কথা মাথায় আসে। সম্প্রতি একটি কোষের গাণিতিক মডেলিং করা সম্ভব হয়েছে। সেভাবে চলতে থাকলে কম্পিউটারে একটি কোষের সামগ্রিক নির্দেশনা, বিন্যাস, ইতিহাস এবং কোষের কার্যপরিধিরও মডেলিং করা সম্ভব হবে। তাই এই জগতে বেঁচে থাকা সমস্ত কোষকে ডিএনএ সফটওয়্যার দ্বারা পরিচালিত জৈব যন্ত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। এভাবে যদি জীবনকে ডিজিটাল সংকেত ও আদেশে রূপান্তর করা যায় তাহলে হয়ত একদিন ডিজিটাল জগত থেকেই জীবন তৈরি হবে। ডিএনএ  কোড বদলে যদি নতুন প্রজাতি তৈরি সম্ভব হয়, তাহলে নতুন ধরণের জীবও তৈরি সম্ভব হবে।
এতক্ষণ আমরা জৈবরাসায়নিক ব্যাখ্যা ও জৈব প্রযুক্তির পরিসীমায় জীবনের স্বরূপ উপলব্দির চেষ্টা করেছি। ইদানিং পদার্থ বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার আমাদের চার পাশের জগত সম্পর্কে নতুন ব্যাখ্যা হাজির করেছে। এটাও জীবনকে ব্যাখ্যা করার জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। যারা নাস্তিক তাদের একটা কড়া অবস্থান আছে যে, যা আমরা দেখিনা তার অস্থিত্ব নেই। কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পদার্থের স্বরূপ আমরা পুরোটা দেখিনা। কারণ, পদার্থের অণু, পরমাণু ও উপপারমাণবিক কণাগুলোর মধ্যে তিন ধরনের জিনিষ থাকে। একটা হল পদার্থিক বস্তুগত স্বত্ত্বা, একটি শক্তি স্বত্ত্বা এবং অপরটি কণার ধর্ম। এই তিনটির মধ্যে একটি স্বত্ত্বা দৃশ্যমান। বাকী দুইটি অদৃশ্য। এদিকে মহানক্সা নামে একটা বইতে স্তিফেন হকিং এবং লিওনারদ ম্লদিনাও উপস্থাপন করেছেন নতুন কথাতাদের মতে এই মহাজগত আমরা যত বড় কল্পনা করি তার চেয়ে অনেক অনেক বড়। এরকম কোটি কোটি মহাবিশ্ব থাকতে পারে। সে কারণেই আমরা যে ধরণের পদার্থ দেখতে ও জানতে অভ্যস্ত তার চেয়ে একেবারে ভিন্ন রকম স্বত্বা বা পদার্থও থাকতে পারে। এমনকি পদার্থের প্রকৃতি ও ধর্ম ভিন্ন হতে পারে। আমাদের এই বিশ্বে বা জগতে পদার্থ যে রকম আচরণ করে এই উল্লেখিত অন্য পদার্থগুলো অন্য রকম আচরণ করতে পারে। তাহলে এই দৃশ্যমান জগতের অন্তরালে অদৃশ্যভাবে শক্তি হিসেবে বা এক ধরণের আদেশ হিসেবে একটা স্বত্ত্বা নিহিত থাকা অসম্ভব নয়।
আর জীবনও ডিএনএ চক্র বা উপ পারমাণবিক কণার মত একটি চক্রক আবর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ধরুন আমরা যে এক গ্লাস পানি পান করছি এতে করে আমরা অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের বিলিয়ন বিলিয়ন কণাকে নিজের শরীরে আত্মীকরন করছি। হয়তো সে পরমাণুগুলো কিছুদিন আগে অন্য কোন দেহে, মাটিতে, পানিতে বা পদার্থে আবদ্ধ ছিল। আবার কিছুদিন না হতেই তা আবার আমার শরীর হতে বের হয়ে যাবে। এভাবে জীবনের- জগতের নিয়ত প্রত্যাবর্তনরত পারমাণবিক কণার মুক্ত ক্রীড়ার নামই জীবন। জীবনের প্রতিটি অণু পরমাণু অস্থায়ী, শুধু অদৃশ্য ক্রীড়াময় তৎপরতা, সে তৎপরতার আদেশ বিন্যাসই নির্ধারণ করে আমাদের জীবনের অতীত- বর্তমান- ভবিষ্যৎ।
লেখকঃ শিক্ষক,দর্শন বিভাগ, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ।

     

Comments

Popular posts from this blog

মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার

সরওয়ার কামাল শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় ভালো, যা সম্পর্কে প্রশংসা করে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রবন্ধ লিখেছেন “ ল্যানসেট ” নামক মেডিক্যাল জার্নালে। কিন্তু এতে আমাদের বগল বাজিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়া এবং বিজ্ঞান শিক্ষা সংকুচিত হয়ে পড়া আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণে আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্যগুলো হাসিল হচ্ছে না, যার একটি হলো সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, অপরটি হলো শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা। অর্থাৎ সব শিশুই যাতে সরকারের সুযোগ ব্যবহার করে উন্নত জীবনের সন্ধান করতে পারে, তার শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, তার মধ্যে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রধান কারণ দারিদ্র্য ও অপুষ্টি বা স্বাস্থ্যহীনতা । মাধ্যমিক পর্যায়েও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে দারিদ্র্য সমস্যার ...

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনা জালে

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনা জালে ............................................................................... সাম্প্রতিক কালে আমাদের নৈতিক উপলব্ধিতে, সামাজিক উদ্বেগে কিংবা মূল্যবোধে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। প্রযুক্তির নিবিড় ব্যবহার, বিশ্বায়নের প্রভাব, বিশ্বরাজনীতির অভিঘাত, বাজার সংস্কৃতির ধাক্কা ও চরমপন্থী ভাবাদর্শের টানাপড়েনে আমাদের চিরকালীন মূল্যবোধ ভেঙ্গে পড়েছে। নৈতিকতার সীমানা সরে যাচ্ছে প্রথাগত বিশ্বাস ও প্রতিষ্ঠানসংলগ্নতা থেকে। গতিময় জীবনের অভিঘাতে চরম অস্থিরতা ব্যক্তি থেকে ব্যষ্টির ব্যাপ্তিতে বিরাজ করছে। সর্বত্র আহাজারি, শোনার অবসর নিয়ে হাজির নেই কেউ। মানুষ যে নির্বিকার তাও নয়, তারা বিকারগ্রস্থ, পূর্ণমাত্রায় ঘোরগ্রস্থ, কেবল অপ্রত্যাশিত ঘটনাপ্রবাহের সাথে তাল মেলানোতে। তারা এখন এমন সব বিষয়ে আলোড়িত হয়, যে বিষয়ের সাথে তাদের সরাসরি যোগ নেই। থাকলেও তা অনেক ক্ষীণ ও দূরবর্তী কার্যকারণ সম্পর্কে আবদ্ধ। একইভাবে, তারা এমন সব পরিণতি ভোগ করে, যার জন্য তারা নিজেরা দায়ী নয়। আর যারা দায়ী তারা এর পরিণতি ভোগ করেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ বয়সের দিকে এই প্যার...

মহেশখালীর সমাজ ও সংস্কৃতি

সরওয়ার কামাল সাগর কূলে গিরিকুন্তলা মোহিনী মহেশখালী দ্বীপের ৩৮৮ বর্গকিলোমিটার ভূত্বকে প্রায় পাঁচ লক্ষ লোকের বসতি। তাদের বসতি ঘিরে গড়ে উঠেছে উপকূলীয়-দ্বীপাঞ্চলীয় সমাজ। এই সমাজসভ্যদের মানসিক ঐক্য ও জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হয়েছে শনাক্তযোগ্য বিশেষ স্থানীয় সংস্কৃতি। মানবজাতির চিরকালীন অভিযাত্রার অংশ হিসেবে দেশের নানা জায়গা থেকে হিজরত করে লোকজন এসে বসতি গেড়েছে মহেশখালীতে। তাই তাদের ভাষা ও আচরণে শনাক্ত করা যায় এমন বৈচিত্র্য ও তারতম্য, যা দিয়ে কক্সবাজারের অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের তুলনায় মহেশখালীবাসীকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করা যায়। যে পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ঠ্যাবলী নিয়ে মহেশখালীর সমাজ ও মানুষের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য তৈরি হয়েছে, চাটগাঁইয়া ভাষার উপভাষাতুল্য মহেশখালীর দ্বীপাঞ্চলীয় বুলি তার মধ্যে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। [1] তবে সমস্যা হলো, লিখিত সাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অভাবে স্থানীয় ইতিহাসের মতোই কালিক সূচকের নিরিখে এর জনসংস্কৃতি বর্ণনা করা দুরূহ। একেতো সংস্কৃতি স্বয়ং একটি ব্যাপক ধারণা, তদুপরি, এটি সতত পরিবর্তনশীল। ভাষা ও সংস্কৃতি স্রোতস্বী নদীর মতো বহমান। মানুষের কথা, স্মৃতি, পুরা...