ভাষা, জাতীয়তা ও পরিচয়
সাংস্কৃতিক রাজনীতির স্বরূপ
সরওয়ার
কামাল٭
ভাষা, জাতীয়তা এবং পরিচয় নিয়ে আবহমান কাল থেকেই সাংস্কৃতিক
রাজনীতি চলে আসছে। ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের
ধারণা, চর্চা এবং সে জাতীয়তার ভিত্তিতে জনগনের তথা লোকসমাজের, বিশেষ অর্থে
ব্যক্তির পরিচয় নির্মাণের চেষ্টা চলছে। একইভাবে ভাষিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যদ্বারা
মানুষের নিয়তি কীভাবে নির্ধারিত হয় তা নিয়ে যেমন অস্থিরতা চলছে, তেমনি কৃত্রিমভাবে
পরিচয় নির্মাণের দ্বারা মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পাঁয়তারা চলছে। উদ্দেশ্য
প্রণোদিতভাবে বর্গীকরণ করার মাধ্যমে বিশেষ বর্গের ভাষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও
অস্থিত্ত্বের সমস্ত চিহ্নকে খারিজ করার ও বাতিল করে দেয়ার সাংস্কৃতিক সঙ্ঘাত চলছে।
উত্তর ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের একটি প্রধান সংকট হচ্ছে পরিচয়ের সংকট, আরো স্পষ্টভাবে
বললে পরিচয়ের রাজনীতির সংকট। কালে কালে বিভিন্ন উপনিবেশের ভেতর দিয়ে স্বাধীনতার গৌরবে
জেগে ওঠা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বর্তমান সংকটও মোটা দাগে সাংস্কৃতিক রাজনীতির
সংকট। সংস্কৃতি যেমন জীবন যাপনের
সামগ্রিক দিককে পরিব্যাপ্ত করে তেমনি সাংস্কৃতিক রাজনীতিও আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক,
অর্থনৈতিক ও সমগ্র জীবন কৌশলের রাজনীতিকে বুঝায়। রাজনৈতিক নীতি ও ক্ষমতা দ্বারা
সংস্কৃতির চারিত্র্য নির্ধারণ, যোজন-বিয়োজন-পরিমার্জন করার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক
শত্রু-মিত্র নির্ধারণ, সাংস্কৃতিক মানদণ্ড দ্বারা মানুষের নাগরিক অধিকার
নির্ধারণের রাজনৈতিক নানা কলাকৌশল নিয়েই সাংস্কৃতিক রাজনীতি। আমাদের বাংলাদেশে এই
সাংস্কৃতিক রাজনীতি ভাষা, জাতীয়তা ও পরিচিতিকে ঘিরে আবর্তিত। বিশেষ করে ভাষা
ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠার পেছনে, এবং কারণে
ভাষা ও জাতীয়তার সংকট ব্যাপক ও তীব্রভাবে ঘনীভূত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির
অভ্যন্তরীণ সম্ভাবনা ও জীয়মান সুপ্ত স্রোত থেকে নতুন করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের
পুনরুত্থান হলে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজনীতি বাইনারি বিরোধে পর্যবসিত হয়। এছাড়া
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজনীতি দুটি প্রধান মিথ্যা উপপাদ্যের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে
আছে। একটি হল, “ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ হলেন দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবক্তা”। অপরটি,
“জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতিয়তাবাদের প্রবক্তা”। এ দুটি আপাত স্বীকার্যের বৈধতা
চূড়ান্ত বিচারে টেকে না। সাধারনভাবে ইতিহাসের এবং বিশেষভাবে উপমহাদেশের রাজনৈতিক
ইতিহাসের সামগ্রিক পাঠ পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়। ফলে সাংস্কৃতিক
রাজনীতির ছদ্ম জ্ঞানভাষ্যকে চ্যালেঞ্জ করে ইতিহাস, দর্শন ও রাজনীতির বৈজ্ঞানিক
ব্যাখ্যার নিরিখে ভাষা, জাতীয়তা ও পরিচিতি ঘিরে আবর্তিত ভিন্ন বর্গের দ্বন্ধ ও
বিরোধকে বুঝার তাগিদ থেকে বক্ষ্যমাণ নিবন্ধ উৎসারিত।
ভাষা
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ।[1] মানুষের
সেরা আবিষ্কার ভাষা। কারণ বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন প্রানী হিসেবে মানুষের সমস্ত
আবিষ্কার, কৃতিত্ব ও নৈপুণ্য প্রমাণের বাহন ভাষা। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও চেতনাজাত
সমস্ত অভিব্যক্তি ভাষার মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। বস্তুগত উপকরণগুলো বাদ দিলে
অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার প্রধান চিহ্নায়ক হল ভাষা। এখনো
পর্যন্ত পৃথিবীতে মানুষ এমন কিছুই আবিষ্কার অথবা উদ্ভাবন করতে সমর্থ হয় নাই, যা
ভাষার চেয়ে উৎকর্ষতর। ভাষা কী? এর সোজাসাপ্টা কোন জবাব নাই। চমস্কি তার রূপান্তরমূলক
সৃষ্টিশীল ব্যাকরণে ভাষাকে মানুষের মানস-অন্তরীণ চিন্তন ফ্যাকাল্টি[2]
হিসেবে বিবেচনা করেন। মনসুর মুসার মতে “ ভাষা হচ্ছে মানুষের এক ধরণের মস্তিষ্কজাত
মানবীয় ক্ষমতা, যা সামাজিক আবহাওয়ায় পরিপুষ্ট হয়ে মানুষের সামাজিক মানবত্বকে
প্রতিষ্ঠা করে”[3]। ব্যুৎপত্তিগতভাবে বাংলা “ভাষা” শব্দটি উৎপন্ন হয়েছে
‘ভাষ’ ধাতু থেকে; যার অর্থ, ‘বলা, কথা বলা’[4]। পুরনো
ভারতে বৈদিক ও সংস্কৃতকে ভাষা বলা হতো না, বলা হতো বৈদিক ও সংস্কৃত। কারণ এ দুটি
ছিল পরিশীলিত ভাষা, যা ব্যবহৃত হতো ধর্মগ্রন্থে ও সাহিত্যে। উচ্চবর্ণের
ভদ্রলোকেরাই এসব ভাষা ব্যবহার করতো। তখনকার সাধারণ প্রাকৃত মানুষেরা যে অ-সংস্কৃত
বা প্রাকৃতিক বুলি ব্যবহার করতো সেগুলোকেই শুধুমাত্র ভাষা বলা হতো[5]। বাংলায় ভাষা
বলতে সাধারণ মানুষের অমার্জিত উক্তির সমষ্টিকে বুঝায়। কিন্তু ইংরেজিতে
“ল্যাংগুয়েজ” শব্দটি এসেছে ফরাসি ‘লঁগ’ ( Langue) শব্দ থেকে, আর ‘লঁগ’ এসেছে লাতিন
‘লিংগুয়া’ ( Lingua ) শব্দ
থেকে। ‘লিংগুয়া’ শব্দের অর্থ জিভ বা জিহ্বা[6]। কথা বলার সময় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জিহ্বার ভূমিকার
কারণে, জিহ্বার রূপক দ্বারাই ভাষা সংজ্ঞায়িত হয়েছে। আজাদ তার ভাষাশিক্ষা ও ভাষা
বিজ্ঞান পরিচিতি নামক গ্রন্থে দার্শনিক আরিস্তোতল এর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আরিস্ততল
ও ঈশপ দু’জনেই মনে করতেন, মানুষ জিহ্বা দিয়েই কথা বলে[7]। অ্যাডওয়ার্ড
স্যাপির Language (১৯২১) নামক বইতে ভাষার সংজ্ঞা দিয়েছেন, “ ভাষা হচ্ছে
স্বেচ্ছায় উৎপাদিত প্রতীকের সাহায্যে ভাব, আবেগ ও কামনা সংজ্ঞাপনের সম্পূর্ণ
মানবিক ও অপ্রবৃত্তিগত পদ্ধতি”[8]।
চমস্কি ভাষাকে কিছু সার্বিক বাক্যবিন্যাস ও শব্দ বিন্যাস নীতির সমষ্টি বলে মনে
করেন, যা সব ভাষা, দেশে একই। তাই ভাষার মূল নিয়মকানুনকে সার্বিক বলে অভিহিত করেন। ফাংশনালিস্ট
বলে পরিচিত ভাষা তাত্ত্বিকরা ভাষাকে টুলস বা হাতিয়ার হিসেবে মানেন। তাই এই
উপকরণসমূহ কীভাবে কাজ করে তা জানলেই
ভাষাকে ভালোভাবে জানা ও ব্যাখ্যা করা যাবে বলে মনে করেন। ভাষা দার্শনিক
ভিটগেনস্টাইন শব্দের দ্বারা বাস্তবানুগ ছবি কল্পনার এবং ব্যবহারের ভিত্তিতে ভাষায়
অর্থ সৃজনের দিকগুলো উম্মোচন করেন। দার্শনিক চিন্তার চিরায়ত পদ্ধতিতে ভাষা নির্ভর
প্রকাশ ও জ্ঞাপন ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করেন যা বার্ট্রান্ড রাসেলকে গভীরভাবে
প্রভাবিত করে। ফলে যৌক্তিক পরমাণুবাদ নামক এক টেকনিক্যাল ভাষা চিন্তা দানা বাঁধে,
এবং পরিণতিতে বিশ্লেষণী দর্শনের উদ্ভব ঘটে। তবে ফাংশনালিস্ট ভাষা চিন্তার সাথে এ
ধরণের বৈজ্ঞানিক ভাষার উদ্দেশ্যগত ও পদ্ধতিগত ফারাক আছে। যাই হোক, সার্বিক বিচারে
মুসার কথাটি প্রণিধানযোগ্য, “ ভাষা হচ্ছে মানুষের বাকসংকেতের সংগঠন। এ সংগঠন জটিল
উৎপাদনক্রম ও স্বেচ্ছাধীন এবং এর দ্বারা একই সমাজের মধ্যে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ
সুসম্পন্ন হয়। অর্থাৎ ভাষা বলতে আমরা বুঝি কতগুলো ধ্বনি, ধ্বনির সমবায়ে পদ, পদের
অনুক্রমে বাক্য এবং বাক্যের অভ্যন্তরে অর্থের প্রবাহ, এবং ঐ অর্থ প্রবাহকে
মস্তিষ্কের একটি বিশেষ স্নায়ুকেন্দ্র দ্বারা নিয়ন্ত্রণ”[9]। ভাষা দর্শনে একটি নতুন শর্তের দিকে ইঙ্গিত করা হয়ে থাকে,
তা হলো যৌক্তিক বিন্যাস। অর্থাৎ শব্দ ও বাক্য বিন্যাসের সাথে সাথে ভাষায় যৌক্তিক
বিন্যাস না থাকলে ভাষার মূল উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। তাই ভাষার একটি পূর্ণাংগ সংজ্ঞার প্রয়োজনে যৌক্তিক
কাঠামোকে অনুল্লেখিত রেখে নিতান্তই ধ্বনি ও প্রতীকের সংহতিকে ভাষা হিসেবে
নির্মাণের প্রকৌশল থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। তবে ভাষার প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে গেলে
ভাষার উৎপত্তি, বিকাশ, ব্যবহার, মনস্থাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক নির্মিতি সম্পর্কে
ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। ভাষা নিতান্তই শব্দ ও ধ্বনির সমষ্টি মাত্র নয়, বরং ইতিহাসের
পথ ধরে সহস্র বছরের বিবর্তনের ভেতর দিয়ে মানুষ তার চেতনাজাত ধ্বনির চিত্র নির্ভর
প্রতীক দ্বারা যেভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে তারই কৌশলী রূপ।[10]
ভাষার উৎপত্তি
পৃথিবীতে মানুষের উদ্ভবের সাথে সাথেই কি ভাষার উৎপত্তি
ঘটেছে, না কি মানুষের লক্ষ বছরের বিবর্তিত স্বরূপের এক বিশেষ স্তরে, কালিক ধারাবাহিকতায়
ভাষা আবিষ্কৃত হয়েছে? ভাষা কি আকস্মিকভাবে প্রস্তুত কোন মানবীয় বৃত্তি, না কি
ঐতিহাসিক বিবর্তন ও পরম্পরায় পুর্বসূরীদের কাছ থেকে আগত কোন জৈবিক সাংস্কৃতিক
উত্তরাধিকার? এ ধরণের নানা প্রশ্নের জাগৃতি ও অনুধ্যান সম্পর্কিত জ্ঞানভাষ্য খোদ মানুষের উৎপত্তি
সম্পর্কিত মতবাদসমূহের চেয়েও সমীহ জাগায়। ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কিত দুইটি তত্ত্ব প্রচলিত আছে। একটি
হল পরম্পরা ভিত্তিক তত্ত্ব ( Continuity
based theory)। যার মূল প্রতিপাদ্য হল, মানুষ পূর্বসূরীদের কাছ থেকে,
ভাষাপূর্ব অবস্থা থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে ভাষা পেয়েছে। অপরটি হল বিনাপরম্পরা
(আগন্তুক) তত্ত্ব ( Discontinuity based theory)। যার মূল
কথা হল, ভাষা হঠাৎ করে মানুষের কাছে
আবির্ভুত হয়েছে। ভাষা সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা এবং অনুমানগুলো এত বৈচিত্র্যপূর্ণ ও
শৈলীযুক্ত যে একেবারে শূন্যতা থেকে হঠাৎ করে পৃথিবীতে ভাষার আবির্ভাব ঘটেছে ভাবা দুষ্কর।
এটাও অকল্পনীয় যে মানুষ জন্মের সাথেই ভাষা নিয়ে এসেছে। যদি তাই হতো তাহলে সবার
ভাষা একই হত। হ্যাঁ, নোম চমস্কির[11]
মতে পৃথিবী কোন এক সময় মহাজাগতিক রশ্মি দ্বারা স্নাত হয়েছিল। ফলে পৃথিবীতে বসবাসরত
প্রাণিকুলের মস্তিষ্কের গঠন ও বিন্যাস পরিবর্তিত হয় এবং ভাষা উদ্ভবের পথ সুগম হয়।
অর্থাৎ মানুষের মস্তিষ্কের অন্তর্লীণ বিন্যাস ও এর বিবর্তনের ফলেই মানুষ ভাষা
উৎপাদন করতে সমর্থ হয়। যেহেতু প্রচলিত ভাষা সমূহের মধ্যে এক ধরণের ঐক্য আছে,
মানুষের মস্তিষ্কের গঠনের মধ্যেও সাযুজ্য আছে, সেহেতু ভাষার একটা সাধারণ স্বরূপ
আছে। তবে ভাষার বিভিন্নতার নজির ও ইতিহাস থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে ভাষার উৎপত্তি
হয়েছে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। মানবজাতির আদি শব্দ বলে খ্যাত ‘ওঁম’ বা শব্দব্রহ্ম,
যা থেকে ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, বৈদিক ভাষার আদি উৎস হিসেবে ভাবা হয়। যদি সেরূপ কোন আদি
শব্দের মাধ্যমে ভাষা আবির্ভাবের বিষয়টি সত্য হয় তাহলে ঈশ্বরের কাছ থেকেই ভাষার
উৎপত্তি ঘটেছে বলে মানতে হয়। অনুরূপভাবে ওল্ড টেস্টামেন্ট ও কোরানেও স্রষ্টার কাছ
থেকে ভাষা এসেছে বলে ইঙ্গিত আছে। সুরা বাকারায় আছে, ওয়া আল্লামা আদামা-ল আসমাআ কুল্লাহা[12] অর্থাৎ
আল্লাহ আদমকে নামসমূহের জ্ঞান শিক্ষা দিলেন। ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে আরবিতে নাম বলতে বস্তুর
পরিচিতিসূচক চিহ্নকে বুঝায়[13]। ফলে
আল্লাহ আদমকে নাম শিক্ষা দানের মাধ্যমে ভাষা
শিক্ষা দিয়েছেন। সেই ভাষা আবার চিহ্ন ও প্রতীক ভিত্তিক। সুতরাং কোরানিক ইঙ্গিত
থেকেও আল্লাহ্র কাছ থেকে ভাষা এসেছে প্রমাণিত হয়। অভিজ্ঞতা ভিত্তিক জ্ঞান চর্চার
কলাকৌশলে, সংবেদন ও প্রতীতি আকারে এসব ধর্মীয় আখ্যানের মর্ম উপলব্দি করা কঠিন। তাই
বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বোরাকে সওয়ার হয়ে ভাষা তত্ত্বের পরিসীমায় ভাষার উৎস
খোঁজার কোশেশ করি। কখনো পাণিনি, কখনো পতঞ্জলি আর কখনো চমস্কি আমাদের পীর আকারে
হাজির হন। তারপরও আমরা এর একটা দ্বিধাহীন জবাব বের করতে পারি নাই। কেন পারি নাই,
সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার এবং সাংস্কৃতিক রাজনীতির সাথে ভাষাসংশ্লিষ্ট মানবীয়
প্রচেষ্টার যোগসূত্র আবিষ্কার করাও আমাদের অনুসন্ধানী অভীষ্টের অংশ।
মানুষ ও ভাষা
মানুষের সমগ্র সত্তা ও চেতনা ভাব বিনিময় ও জ্ঞাপনের জন্য
উন্মুখ। অন্তর্গত তাড়না থেকেই মানুষ নিজের চেতনাকে অপরের সাথে বিনিময়সুত্রে স্থাপন
করতে চায়। মানুষ নিজের আবেগ, আকাঙ্ক্ষা, প্রেম, স্নেহ, ক্ষোভ, বিক্ষোভ, রাগ,
বিরাগ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা সব কিছুই ভাষার মাধ্যমেই প্রকাশ করে। মানুষের বিকাশ,
উৎকর্ষ সংস্কৃতি, প্রকর্ষ জীবনকৌশল সব কিছুই ভাষা কেন্দ্রিক। ভাষায় মানুষের
সামগ্রিক জীবন ভাবনার ও চিন্তা চেতনার ছায়াপাত ঘটে। বিপরীতক্রমে ভাষা মানুষের
চেতনা ও কল্পনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ভাষা ও চিন্তার কাঠামোতেই মানুষ নিজের সমস্ত
সৃজনী শক্তি ব্যবহার করে, অন্যভাবে বলা যায় মানুষ যা হয়ে ওঠে তা অনেকটা ভাষা
দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই মানুষের সাথে ভাষার যোগ মুখ্য, নানা দিক থেকেই ভাষার সাথে
মানুষ ও মানুষের সাথে ভাষার একটা প্রবহমান নির্ভরশীলতা আছে। কাঠামোবাদি ভাষাতাত্ত্বিকগণ
মনে করেন ভাষার কাঠামো দ্বারা মানুষের চিন্তা নিয়ন্ত্রিত হয়। ভাষাকে অতিক্রম করে
আরও বিমূর্ত পর্যায়ে চিন্তা করার মানসে যে সূত্রায়নের প্রয়াস লক্ষ করা যায়, বিশেষ
করে, বিজ্ঞান, দর্শন ও অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাও ভাষার এক বর্ধিত
সংস্করণ ছাড়া কিছু নয় । ভাষার সাথে বিমূর্ত চিন্তার যোগসূত্র স্থাপনের যে মাঝামাঝি
জায়গা , প্রতীক ও চিহ্ন ভিত্তিক মাল মশলা দিয়েই তাতে সূত্রায়ণের নকশা আঁকা হয়। ভাষা
ভিত্তিক চিন্তাকে বিমূর্ততার পর্যায়ে নিয়েই কেবল প্রকৃতির ভাষার সাথে মানবীয় ভাষার
এবং মহাজাগতিক যুক্তির সাথে মানব চিন্তার সম্পর্ক রচনার কোশেশ করা হয়। এ দিক থেকে
যদি চিন্তা করি তাহলে আমাদের স্বীকার করতে হবে যাদের মুখে ভাষা নেই, এমনকি যাদের
বাক প্রত্যঙ্গ নেই, তাদেরও বিমূর্ত ভাষা আছে। আর এতটুকু কবুল করলে মানতে দ্বিধা
নেই যে আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে সব কিছুরই জ্ঞাপনযোগ্য চিন্তা, যুক্তি ও ভাষা
আছে। ফলে মানুষ যে প্রকৃতির অংশ হয়ে আছে তার বস্তুগত কৌশল নির্ধারিত হয় পদার্থ
বিজ্ঞান দ্বারা আর অবস্তুগত যোগাযোগ ও জ্ঞাপন কৌশল নির্ধারিত হয় ভাষার মূর্ত ও
বিমূর্ত স্তর দ্বারা। বুঝার সুবিধার্তে আমি যদি একটি ছোট উদাহরণ দ্বারা ব্যাখ্যা
করি তাহলে এভাবে বলব, আমরা যে প্রতিটা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বায়ু সেবন করছি, এতে করে
প্রচুর অক্সিজেন পরমাণু আমাদের শরীরে নিচ্ছি। এই অক্সিজেন ফুসফুস হয়ে বিশেষ চাপে
আর্দ্রতা লাভের মাধ্যমে, হিমোগ্লোবিনে অথবা রক্তিয় প্লাজমায় শোষিত হয়। একই
অক্সিজেন ভিন্ন ভিন্ন তাপে ও ভিন্ন ভিন্ন চাপে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ও কোষে প্রবেশ
করে। কোষের ভাঙ্গা গড়ার কাজে, সেলুলার
রেসপিরেশনে অক্সিজেনের ভূমিকা মূখ্য। কিন্তু অক্সিজেন যেভাবে রক্তে শোষিত হয়, বা
কোষের মেরামত ও পুনর্গঠনে সহায়তা করে তা নির্ভর করে অক্সিজেন কীভাবে ঐ বিশেষ কোষের
সাথে অক্সিজেন পরমাণুর সাংকেতিক যোগাযোগ স্থাপন করে তার ওপর। এই সংকেত বিমূর্ত
গাণিতিক সংকেত। অক্সিজেন পরমাণু ও কোষ এখানে বিমুর্ত স্তরের সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার
করছে। কাজেই, মানুষের বাহ্যিক ও আটপৌরে ব্যবহারিক ভাষা হল বাংলা, ইংরেজি, আরবি,
হিন্দি কিন্তু মানুষের ভেতরকার গোপন, গভীর ভাষা একান্তই বিমূর্ত। ভিন্ন ভিন্ন
প্রকারের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আমরা বিভিন্ন স্তরের ও রূপের ভাষা ব্যবহার করি।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি
বাংলা ভাষার উৎপত্তি নিয়ে লেখাজোখার বিপুল বিস্তৃতি দেখে
বুঝা যায়, এ নিয়ে মত ভিন্নতার ও মত বৈচিত্র্যের অভাব নাই। বাংলা ভাষার বস্তুনিষ্ঠ
ইতিহাস জানার জন্য পুর্ববর্তী লেখকগণ কি লিখেছেন তা পর্যালোচনা করার চেয়ে তারা
কীভাবে বা কী পদ্ধতিতে তা লিখেছেন তা বিচার করাই শ্রেয়তর ইতিহাস অন্বেষার কৌশল হতে
পারে। আর্যদের আগমনের পূর্বে ভারতবর্ষে, বিশেষ করে বর্তমান বাংলায় সুগঠিত,
সুপরিকল্পিত এবং পরিপুর্ণ কোন ভাষা ছিল না। থাকলে নিশ্চয় মহেব্জদারো বা হরপ্পায়
লিখিত কোন দলিল বা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকতো। তবে কোন লিপির হদিস না মিললেও
হরপ্পায় কিছু সিল/চিহ্ন ও প্রতীক আবিস্কৃত হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় মিশরীয় সভ্যতার
মতো এখানে লিপিমালা বা লিপি ভিত্তিক ভাষা ও শিক্ষার বিস্তার ঘটে নি। তবে নগর
পরিকল্পনা, কৃষি ও অর্থনৈতিক বিনিময়ের চিহ্ন হিসেবে যে সব প্রতীক আবিষ্কৃত হয়েছে
তা থেকে ধারণা করা যায়, সে কালে সভ্যতা অনেক উন্নত ছিল এবং মানুষের চিন্তা,
পরিকল্পনা ও কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসের প্রকর্ষতা ছিলো। সে যাই হোক, বাংলাভাষার
উৎপত্তি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা থেকেই হয়েছে এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। প্রায় ৫০০০
বছর পূর্বে ইউরোপের মধ্যভাগ হতে দক্ষিণ-পূর্বাংশে বসবাসকারি লোকদের ব্যবহৃত ভাষাকে
মূল ইন্দোইউরোপীয় ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে মূলভাষা আবার দু’ধারায় বিভক্ত
ছিল। একটা কেন্তুম (Centum) ও অপরটি শতম ( Satam) । এই শতম
বিভাগ থেকে যে আর্য ভাষা উদ্ভূত হয়েছে তার সাথে বাংলা ভাষার ঘনিষ্ট যোগ রয়েছে[14]। আর্য ভাষার আবার দুইটি শাখা। একটি ইরানি, অপরটি ভারতী।
ভারতীয় আর্য ভাষা হতে ক্রমে বিবর্তনের মাধ্যমে বাঙলা ভাষার উৎপত্তি ঘটেছে। বাংলা
ভাষা সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত কি না এ নিয়ে মত ভিন্নতা রয়েছে। তবে ড মুহাম্মদ
শহীদুল্লাহ সংস্কৃত থেকে সরাসরি বাংলা ভাষার উৎপত্তি বিষয়ক মতকে নাকচ করেন। তার মতে
ভাষা প্রবাহের মধ্যে বাঙলার পূর্বে অপভ্রংশ এবং প্রাকৃত যুগের প্রমাণ মিলে। অথচ
প্রাকৃত যুগের সমসাময়িক সাহিত্যিক ভাষা হলো সংস্কৃত[15]। প্রাকৃতের
পূর্বে প্রাচীন প্রাকৃতের যুগ, যার সাহিত্যিক ভাষা হলো পালি। আর প্রাচীন প্রাকৃতের
পূর্বে হলো প্রচীন ভারতীয় আর্য ভাষার যুগ। কাজেই বাঙলা সংস্কৃতের দুহিতা নয়। তবে
প্রাকৃতেরও ভিন্ন ভিন্ন রূপ আছে। তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিনি
বাঙলার পূর্বসূরী প্রাকৃতকে গৌড়ীয় প্রাকৃত বলে অভিমত দেন। কিন্তু ড এনামুল হক, এই
মত গ্রহনযোগ্য মনে করেন না। তার মতে মাগধী প্রাকৃত থেকেই বাঙলা ভাষার উৎপত্তি[16]। তিনি
আরও মনে করেন, ইন্দোইউরোপীয় ভাষাভাষী আর্যরা খ্রি পূর্ব আনুমানিক ৩০০০ থেকে ১৫০০
বছরের দিকে এশিয়া মাইনর হয়ে ইরান মালভূমি অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে[17]। আর্য শব্দের অর্থ যারা শাস্ত্র সীমায় গমন করেন বা
জ্ঞানী। আর্য মানে জ্ঞানশীল, শ্রেষ্ঠ, পূজ্য, সম্ভ্রান্ত প্রভৃতি। প্রাচীন আর্যরা
গান্ধার অঞ্চলে, যা বর্তমানে পেশওয়ার নামে পরিচিত এবং ব্রহ্মাবর্ত অঞ্চলে অর্থাৎ
পাতিয়ালা, অম্বলা, কর্নান ইত্যাদি এলাকায় বসতি শুরু করে। আর্যরা বৈদিক অগ্নি,
ইন্দ্র, বরুণ প্রভৃতির পূজা, হোম ও বলির ব্রাহ্মণ্য ধারণার প্রচলন করেন এবং আর্য
রাজতন্ত্রের প্রতিষ্টা করেন[18]। তবে আর্যদের সবাই বৈদিক ছিলেন না। বৈদিক ধর্ম বহির্ভূত
একদল গঙ্গার তীরবর্তী পূর্বাঞ্চলে বসতি স্থাপন করে থাকবেন, এমন মত আছে। এদেরকে বলা
হয় ব্রাত্য। “ব্রাত্য” শব্দের অর্থ আচারভ্রষ্ট বা পতিত। মগধ রাজ্যই ছিল ব্রাত্যদের
প্রধান কেন্দ্র, এবং এই মগধ রাজ্য থেকেই প্রাচীন আর্যরা বঙ্গে এসেছিলেন। মৌর্যযুগে
বাংলা বলা, বাংলায় আসা, এমন কি বাঙ্গালিকে বিয়ে করা সমাজ গর্হিত কাজ হিসেবে গণ্য
হতো। কারণ শাস্ত্রীয় মার্গ, সংস্কৃতি আশ্রিত বেদ জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক আত্মম্ভরিতার
কারণে আর্যরা এতদাঞ্চলের নিজস্ব, লোকজ ভাষাকে এবং গণমানুষের সংস্কৃতিকে হেয় করে
দেখতো। বাংলাকে তাদের আধিপত্যের আওতায় আনতে না পেরে খেদ প্রকাশ
করতো। “আজি ভুসুকু বাঙালি বইলি” বলে ভুসুকুকে বাঙালি রমণি বিয়ে করা, বাঙালির সাথে
মেশা এবং বাংলা জবানে কথা বলার কারণে তিরস্কার করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায়, বাংলা
ভাষায় কথা বলাও আর্য চেতনার পরিপন্থী ছিল। আর্যদের একটি প্রধান এজেন্ডা ছিল বেদ
জ্ঞান ও আর্য ভাষা সাধারণ্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা। শেষ
পর্যন্ত তারা সফল হয়। পাল বংশের রাজত্ব
কালে বাংলাদেশে আর্য ধর্ম, সভ্যতা ও আর্যভাষা সর্বত্র গৃহীত হয়। ঐ সময়ে বৌদ্ধ
দর্শন, হীনযান, মহাযান এবং সহজযান প্রভৃতি বৌদ্ধমত দেশে প্রচারিত হয় এবং
প্রতিষ্টিত হয়। এই সময়েরই জনসাধারণের সুখদুঃখের কথা, ধর্মানুভুতির উপলব্দির কথা
প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় রচিত হত। বৌদ্ধা সিদ্ধাচার্যের রচনা চর্যাপদ ও সরহ
প্রভৃতির দোহাকোষ ঐ সময়েরই কৃতি[19]।
বাংলা সাহিত্যের তিনটি বিভাজন রেখা ( প্রাচীন যুগ, মধ্য
যুগ ও আধুনিক যুগ) অনুযায়ী ভাষা তার নিজস্ব রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে বিবর্তিত
হয়েছে। লিখিত ভাষার ক্ষেত্রে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলে। প্রাচীন যুগে, অষ্টম থেকে
দ্বাদশ শতকের দিকে, হিন্দু ও বৌদ্ধদের প্রাধান্য ছিল।
বৌদ্ধরা এখানকার অধিবাসী ছিল, অন্যদিকে কর্ণাটক থেকে আগমন ঘটেছিলো হিন্দুদের, যারা
ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং জাতিভেদ প্রথার প্রবর্তক ছিলেন। বৌদ্ধদের আমলে ভাষা ছিল পালি,
প্রাকৃত ও অপভ্রংশ[20]। সেন আমলে সংস্কৃত ভাষা ও রাজন্যবর্গের সংস্কৃতি
পৃষ্টপোষকতা পেয়েছিলো। মধ্যযুগে ইসলামের প্রভাব, শাক্ত মতবাদ ও বৈষ্ণব মতবাদের
প্রভাবে সাহিত্যের, সে সাথে ভাষারও গতিপথ নির্ণিত হয়েছিল। তবে মধ্যযুগে সুলতানি
বাদশাদের আমলে ফারসি ভাষাকে রাজদরবার ও রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে চালু করায় বাংলা
ভাষার রাজনৈতিক গুরুত্ব লোপ পায়। ধর্মীয় গ্রন্থ ও মুসলমানদের প্রার্থনার ভাষা আরবি হওয়ায়
বাংলার প্রতি হীনভাব ও হিংসা বেড়ে যায়, যা
পরবর্তীতে মুসলিম বাঙ্গালীর জন্য ভাষা চর্চার স্ববিরোধী সংকট নিয়ে আসে। কিন্তু
সুলতানগণ সংস্কৃত বনাম প্রাকৃত, বাংলা বনাম ফারসি কিংবা একাধিক ভাষার মিতষ্ক্রিয়ার
সাথে যুক্ত সাংস্কৃতিক রাজনীতি বোঝতে সক্ষম ছিলেন। সংস্কৃতের বিপরীতে তারা বাংলাকে
পোষকতা দিয়েছিলেন। সে সময় মুসলিম কবি সাহিত্যিকগণও প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভাষা বিভ্রান্তি দূরীকরণে কলম ধরলেন। ঐ সময়ে
কবি আবদুল হাকিম লিখলেন, “ যে জন বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী/ সে জন কাহার জন্ম
নির্ণয় ন জানি”। মধ্যযুগে ভাষার সাথে ধর্মের সম্পর্ক, ধর্ম প্রচার-প্রসারের সযত্ন
প্রচেষ্টা, সর্বোপরি ধর্মীয় আখ্যান ও ইমেজারিকে স্থানীয় ভাষায় পুনরূৎপাদন করার
তীব্রতা পরিলক্ষিত হয়। পশ্চিমা সাহিত্যের সাথে পরিচিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলা ভাষা
ধর্মীয় আবর্ত থেকে উদ্ধার পায় নি। অবশেষে বাংলামুলুকে ইংরেজদের শাসন প্রতিষ্ঠার পর
সাহিত্যে আধুনিক যুগের সুচনা ঘটে[21]।
তবে দুঃখিনী
বর্ণমালার কথা না বললে বাংলাভাষার কালিক রূপান্তরের মূল গতিপথ অনুসরণ করা সম্ভব
হবে না। প্রতীক ও চিহ্ন থেকে বাংলা বর্ণমালার উৎপত্তি হয়েছে। কারণ ভাষার প্রাথমিক ও মূল একক হল
ধ্বনি, তা যখন চিত্ররূপে আসে তখন অক্ষরে পরিণত হয়। ভাষা ধ্বনি স্তর থেকে প্রতীকে
রূপান্তরের সাথে সামাজিক ও কালিক বিবর্তনের সম্পর্ক নিবিড়। ভাষা নিজেও সামগ্রিক
অর্থে সাংস্কৃতিক নির্মিতি এবং সে নির্মাণের কারিগরেরা রাজনৈতিক ক্ষমতা দ্বারা,
আধিপত্য কিংবা পৃষ্টপোষকতা দ্বারা প্রভাবিত হন। বাংলা বর্ণমালার উৎস হিসেবে
দেবনাগরি লিপি গ্রহন করা এবং দেবনাগরি বর্ণ হওয়ার জন্য বা হওয়ার ফলে যে সাংস্কৃতিক
রাজনীতি চলেছে তা কীভাবে বাংলা ভাষার সামগ্রিক অস্থিত্ত্বের সাথে যুক্ত তা আমলে
নেয়া উচিত । ভাষার ওপর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপার কত
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তার ইতিহাস আমরা জানি। প্রথম দিকে বাংলা ছিল মূলত কথিত
বুলি, তাই এর কোন লিখনযোগ্য বর্ণমালা ছিল না। প্রাচীন ভারতীয় ভাষা থেকে বর্ণমালা
গ্রহন করার ফলে বাংলা লিখনযোগ্য রূপ পায়। কিন্তু কোন ধরণের লিপি সামাজিক,
সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে তা নিয়ে দ্বান্দিক তর্ক জারি ছিল সব
সময়। বাংলা লিপি পাল পূর্ব যুগে বিধ্বস্ত হয়ে পাল যুগে উদ্ধার পেলে তাতে তাদের
সমকালের ও ঐতিহাসিক চেতনার ও ঐতিহ্যের মাপকাঠিতে গ্রহণ- বর্জন চলে। আবার সেন যুগে
বিলুপ্ত হয়ে মুসলিম আমলে আত্মপ্রকাশ করার ফলে, লিপির সাথে ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত
প্রতীক, চিহ্ন ও তাৎপর্য সংযুক্ত করার রাজনীতি চলেছে[22]। দেবনাগরী
বর্নমালা গ্রহণ করার ঐতিহাসিক
ধারবাহিকতায় পাল, সেন, সুলতানদের রাজনৈতিক প্রভাবে নানা যোজন বিয়োজন চলেছে।
বর্ণলিপি ও বর্ণসংখ্যা নিয়েও চলেছে ছুত অচ্যুতের মার্গ। শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের
আমলে যখন উভয় বঙ্গের রাজনৈতিক সংহতি বিধান হয়েছিল, তখনও মুসলিম এবং হিন্দুদের
ব্যবহৃত বর্ণসংখ্যার ভিন্নতা ছিল। সুলতানদের দ্বারা পার্সি ভাষাকে রাজভাষা করার
কারণে বাংলা ভাষার বিকাশ তথা স্থানীয়
ভারতীয় ভাষা- সংস্কৃতির বিকাশ বাধাগ্রস্থ হওয়ার কথা থাকলেও, সুলতানগণ এখানকার
আর্য- অনার্যের বিরোধ এবং ভাষা ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের ব্যাপার সম্পর্কে সচেতন
ছিলেন। সুলতানদের সালতানাত সুরক্ষিত করার সাথে আর্য প্রভাব মোকাবেলার সাস্কৃতিক
কৌশলের সম্পর্ক ঘনিষ্ট ছিল। তাই সুলতানগণ দেশী ভাষা এবং অনার্য সংস্কৃতি বিকাশের
ক্ষেত্রে পৃষ্টপোষকতা দিয়েছিলেন, মূলত আর্য প্রভাব থেকে সাধারণ মানুষের
গণসংস্কৃতিকে মুক্ত করার জন্য। আর্য ও বৈদিক প্রভাব থেকে এ দেশি ভাষা ও সংস্কৃতি
আলাদা স্বাতন্ত্র্য নিয়ে পুষ্ট হচ্ছিল। শুধু তাই নয়, সংস্কৃত ভাষাকে পেছনে ফেলে
হিন্দি ও উর্দু নামক দুইটি পৃথক ভাষারও জন্ম হয়েছিল। আর্য এবং মুসলমান উভয়েই সাম্রাজ্যবাদি
হিসেবে এ দেশে এসেছে এবং এ দেশের ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতিকে নির্মাণ করেছে[23]। কিন্তু ইংরেজদের হাতে মোগল ও নবাবী শাসন পদানত হলে নতুন
করে ইংরেজি ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সাথে ইংরেজি ভাষার
আধিপত্য ঘটে। ইংরেজি ভাষাকে ভর করে পশ্চিমা দর্শন, চিন্তা ও বৈজ্ঞানিক
দৃষ্টিভঙ্গিও সমাদর লাভ করে। ইংরেজির প্রভাবে ও অনুকরণে ধর্মতাত্ত্বিক পূনর্জাগরণ
বাংলা ভাষার অণু পরমাণুতে নতুন নির্মিতি ও বিন্যাসের সুচনা ঘটায়। ইউরোপে
রেনেসাঁসের অনুকরণে বাঙালির পুনর্জাগরণ ঘটে।
আধুনিক যুগে ইংরেজরা যখন বাংলা দখল করে এবং পরে ১৭৯৩
খ্রি তে লর্ড কর্ণওয়ালিশ কর্তৃক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা হয় তখন মুসলমানরা
ভূমিহারা হয়ে যায়। তার ওপর লর্ড বেন্টিং এর আমলে লর্ড মেকওলের সুপারিশক্রমে
রাজভাষা হিসেবে ফারসির পরিবর্তে ইংরেজি গৃহীত হলে এতদিনকার সমাজবিন্যাস, ক্ষমতা
কাঠামো ও ভাষার বিষয়টা চূড়ান্তভাবে ওলট পালট হয়ে পড়ে[24]। ভাষা
হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অর্থনীতির স্বাধীন চলক। সহজ কথায়, ঔপনিবেশিক শক্তি ভাষার মাধ্যমেই
দেশি মানুষের অর্থনৈতিক নিয়তি, উৎপাদনের হাতিয়ার ও কেরানিগিরির চাকুরি নিয়ন্ত্রণ
করতে শুরু করল। পরে সিভিলিয়ানদের এ দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সমাজ
সম্পর্কে পরিচিত করানোর মানসে ১৮০১ খ্রি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হলে,
এবং ১৮১৭ সালে হিন্দু কলেজ ( বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কলেজ) প্রতিষ্ঠা করা হলে বাংলা
গদ্যের সূত্রপাত ঘটে[25]। সে সময়ে
যারা বাংলা ভাষাকে সাহিত্য,
দর্শন, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক চিন্তা দ্বারা পুষ্ট করছিলেন তারা ইংরেজির অনুকরণে
বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ঘটাচ্ছিলেন। ইংরেজি
সাহিত্যে যেমন খ্রিশ্চিয়ান পুরাণ
ও চিন্তার আধুনিক নির্মান সম্পন্ন হয়েছে তেমনি বাংলা ভাষাতেও হিন্দু পুরাণ ও
ধর্মীয় চেতনা দ্বারা আধুনিক ব্যাখ্যা ও সাহিত্যের পুননির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
মাইকেল মধুসুধন দত্ত এই মিথ পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তি। যদিও
উপনিবেশ পূর্ব বঙ্গ দেশে সাহিত্যের একটি গ্রহণযোগ্য রূপ ছিল, বাঙালি রেনেসাঁ দ্বারা
প্রভাবিত ও রেনেসাঁর মূল অগ্রপথিকগণ সে পুরানা রূপকে একেবারে এড়িয়ে গিয়ে নতুনভাবে
ভাষার বিনির্মাণ করতে শুরু করতে লাগলেন। পুরনো ভাষাকে, বিশেষ করে নিম্ন বর্গের
ভাষাকে বাদ দিয়ে ঔপনিবেশিক প্রভাবে ভদ্র লোকের ভাষা তৈরির বিষয়ে আপত্তি তুলেন
স্যার আশুতোষ মুখার্জি। বাংলা ভাষায় প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষাও স্যার আশুতোষের
প্রচেষ্টায় চালু হয়। পরে কবি জসীম উদদীন নিজেও ভদ্র লোকের ভাষা বিকৃতির বিপরীতে
জাতীয় ভাষা পুনরোদ্ধারের প্রচেষ্টা চালান। “পল্লীকবি” বলে কথিত বদনামের তোয়াক্কা না করে কবি জসীম
উদদীন এ অঞ্চলের গণমানুষের ভাষাভঙ্গিকে সাহিত্যের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াসী হন।
তিরিশের কবিদের কবিতা ও সাহিত্যভাষার সাথে জসীম উদদীনের ভাষার পার্থক্যের মাঝে
নিহিত আছে বাংলা ভাষার এক বিশেষ ইতিহাস। সাধারণ মানুষের মাটিগন্ধী ভাষার জায়গায়
কলোনিয়াল ইংরেজির ফুটানি দ্বারা প্রভাবিত ও কৃত্রিমভাবে আরোপিত ভদ্রলোকের ভাষাকে প্রবিষ্ট
ও প্রমোট করার ইতিহাস। এছাড়া পশ্চিমা অনুকরণে বাংলা সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে বাংলা
ভাষার অধিকতর বাংলায়ন করার পরিবর্তে ইংরেজি ছাঁচে ভারতীয় পুরাণের নির্মিতি বাংলা
ভাষার আকার ও আকরণ ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। বাংলা সাহিত্যে সাম্প্রদায়িক চরিত্র ও
বিশেষ ধর্ম ও বর্ণগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ প্রসূত আখ্যান সৃষ্টি হল। ইউরোপীয়
রেনেসাঁভিত্তিক সাহিত্য চর্চার আদলে বাংলাতেও অতীতচারী চিন্তাবিদ ও লেখকগণ তাদের
প্রাচীন ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে নতুন দিনের চেতনায় নবায়ন করতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক চেতনার
উৎসারণ ঘটান। হিন্দু-মুসলিম নামক বাইনারি অবস্থানে থেকে আর্য-আরবি মিথের বাইনারি
বিরোধ সাহিত্যের জায়গা দখল করতে শুরু করে। ইংরেজদের ঔপনিবেশিক কৌশলের সমান্তরালে
বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির রূপান্তর কৌশল নিবিড় সম্পর্ক রেখে, কখনো নজরদারি ও কখনো পৃষ্টপোষকতা
লাভ করেছে। কাজেই ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে যারা বাংলা ভাষার সেবা করেছেন আর যারা
ক্ষমতাদ্রোহী হয়ে মেহনতি মানুষের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও সাংস্কৃতিক নিরাপত্তার
ব্যূহ রচনা করেছেন তারা ভাষার অন্তরালে একটি স্পষ্ট বিভেদরেখা বজায় রেখেছেন।
বাংলা ভাষা তার শৈশব পেরিয়ে কতটুকু সাবালকত্ব ও পরিণত
রূপ লাভ করেছে তার প্রধান চিহ্নায়ক, এর ধ্বনিতাত্ত্বিক সমৃদ্ধি। তবে সাহিত্যের
ভাষা হিসেবে এর বিকাশ ও পুর্ণতার জন্য বাংলা ভাষা অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে
ঋণী। জীবনানন্দ দাশ নোবেল না পেলেও পৃথিবীতে নোবেল পাওয়া অনেক কবির তুলনায় তার
ভাষা, বর্ণনাশৈলী ও কাব্যক্ষমতা সমৃদ্ধতর। রূপসী বাংলার সমস্ত রূপ, সংবেদ,
চিত্রকল্প জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ফসিল হয়ে থাকবে, অনাগত দিনের বাংলা সাহিত্যের
মিউজিয়ামে। কিন্তু জ্ঞান চর্চার ভাষা হিসেবে বাংলা যেন হামাগুড়ি দিচ্ছে। সেটা
অবশ্যই ভাষার দোষ নয়, ভাষার রাজনৈতিক অর্থনৈতিক তাৎপর্য, কলোনিয়াল লিগ্যাসি/
ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাথে দুর্বল ও
মেহনতি মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের টানাপড়েনের ফল মাত্র। সেটাকে উত্তর-ঔপনিবেশিক
সংস্কৃতির প্যাথলজি বা বিকার বলা যায়, যে বিকারে অনুকৃতি আছে, পুনরুৎপাদন আছে
কিন্তু নতুন চিন্তা কিংবা সৃষ্টিশীল চিন্তা নেই। ঔপনিবেশিক শাসনের সমাপ্তিলগ্নে,
ইংরেজি অবসানকল্পে পুরো ভারতের ভাষাপ্রশ্ন ও ভাষা সমস্যা নতুন করে দানা বাঁধে। ব্রিটিশ
সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সাংবিধানিক রূপরেখা প্রণয়নের দায়িত্ব
পান মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বাধীন কমিশন। ১৯২৯ সালে দেয়া নেহেরু রিপোর্টে হিন্দিকে
জাতীয় ভাষা বানানোর পরামর্শ দেয়া হয়, যা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়দলের মুসলমানের
কাছে অগ্রহণযোগ্য ঠেকল। হিন্দিকে জাতীয় ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়া অনেকটা হিন্দু
আধিপত্যবাদের প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হল। স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম লীগ এ প্রস্তাবের
বিরোধীতা করলে মহাত্ম্বা গান্ধী অখণ্ড ভারতের জাতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দুস্থানি
গ্রহণের প্রস্তাব করলেন। যারা আরবি বর্ণে লিখবে তারা উর্দূ, আর যারা দেবনাগরী
বর্ণে লিখবে তারা হিন্দিকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে বলে মত দেন।
অন্যদিকে, ১৯৩৬ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ উর্দু ভাষা সংরক্ষণের জন্য, জায়মান
পাকিস্থান রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে উর্দু গ্রহণের পক্ষে মতৈক্যে পৌঁছেন। ১৯৪০ সালে
লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে মুসলিম অধ্যুসিত অঞ্চল নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের
প্রস্তাব নেয়া হলে পাকিস্থান রাষ্ট্রের সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়। এদিকে, ১৯৪৭ সালের জুন-জুলাইতে এক কনফারেন্সে আলীগড়
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জিয়াউদ্দিন আহমেদ উর্দুকে মুসলিম জাতিরাষ্ট্রের ভাষা হওয়া
উচিত বলে অভিমত পোষণ করেন। কিন্তু ভিসি জিয়াউদ্দিনের অভিমতকে খণ্ডন করে ১৯৪৭ সালের
২৯ জুলাই আজাদ পত্রিকায় “পাকিস্থানের ভাষা সমস্যা” নামে এক প্রবন্ধ লিখেন ড
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ( চলবে...)
[1] কোরানে মানুষকে বলা হয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত, যার বাংলা তর্জমা, সৃষ্টির
সেরা জীব। এছাড়া বিভিন্ন ধর্ম, লোকজ সংস্কার ও প্রাচীন মানুষের না না নিদর্শনেও
মানুষকে সেরা জীব হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে
নাই’- বড়ো চণ্ডীদাসের কথা থেকেও আমরা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের সিদ্ধান্ত অনুমান করতে
পারি। মানবতাবাদের মূল দার্শনিক চেতনাও মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বোধ থেকে উৎসারিত।
[11] নোম চমস্কি একজন ভাষা দার্শনিক। যুক্তরাষ্ট্রের
ম্যাসাসুয়েটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি ( এম আই টি) এর দর্শন ও ভাষাতত্ত্ব বিভাগের
অধ্যাপক। রূপান্তমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ ও ভাষাতত্ত্বের প্রধান তাত্ত্বিক হিসেবে
তার খ্যাতি কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া সাম্রাজ্যবাদি আধিপত্যবাদ ও পশ্চিমা
মিথ্যা জ্ঞান উৎপাদনের কারখানা ও তৎপরতার বিরুদ্ধে সদা উচ্চকণ্ঠ থেকে তিনি নিজেকে
আবিশ্বের বিবেকে পরিণত করেছেন।
[13] নাম সমূহের আরবি প্রতিশব্দ ‘আসমাআ’ যা ‘ইসিম’ এর বহুবচন।
ইসিম শব্দটি ‘ওসম’ থেকে উদ্ভূত। ‘ওসম’ মানে পরিচিতিসূচক চিহ্ন। ড। মুঈনুদ্দীন আহমদ
খান, যুক্তি তত্ত্বের স্বরূপ সন্ধানে, প্রাচ্য বনাম প্রতীচ্য, সাদার্ন
বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম, ২০১৩, পৃষ্টা-৩৩
[16] মুহাম্মদ এনামুল হক, বাঙলা ভাষার ক্রমবিকাশ, বাংলাদেশ,
মনসুর মুসা সম্পাদিত, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯৪, পৃ-১১৪।
[20] মুহাম্মদ আব্দুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান, বাংলা
সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা-২০০৫, পৃ-৩
[22] ড এস এম লুৎফর রহমান, বাঙ্গালির লিপি ভাষা, বানান ও
জাতির ব্যতিক্রমী ইতিহাস, ধারনী সাহিত্য সংসদ, ঢাকা -২০০৪, পৃ-৪৭
[23] আহমদ ছফা, ভাষা বিষয়ক চিন্তাভাবনা, নির্বাচিত অরাজনৈতিক
প্রবন্ধ, খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি, ঢাকা-২০১১, পৃ-১০৩
[24] মুহাম্মদ আব্দুল
হাই ও সৈয়দ আলী আহসান, বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, আহমদ পাবলিশিং হাউস,
ঢাকা-২০০৫, পৃ- ৪
Comments