Skip to main content

একীভূত সমাজ, টেকসই গ্রহ



বিশ্ব দর্শন দিবস
একীভূত সমাজ, টেকসই গ্রহ
সরওয়ার কামাল

নভেম্বর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার হিসেবে আজ, ২১ নভেম্বর, বিশ্ব দর্শন দিবস।  জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক ২০০৩ খ্রি সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।  সে হিসেবে এটি দর্শন দিবস পালনের একাদশতম বর্ষ। এই বিশেষ দিনকে সামনে রেখে স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মত বিনিময় করে থাকেন।  এ বছরের দর্শন দিবসে দার্শনিক আলোচনার আঙ্গিকে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলোর উপর আলোকপাত করা হচ্ছে এবং সে বিষয়গুলোকে বিশ্ববাসীর গ্রাহ্যতায় আনার দৃশ্যমান প্রয়াস চলছেচারদিকে যখন উত্তর-আধুনিক ভাঙ্গনের খেলা, যূথবদ্ধ সমাজ গাঁথুনির ভেঙ্গে পড়া, তখন সমাজ নিরীক্ষার অনুপাঠ ও দার্শনিক দাওয়াই উৎপাদনের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। দর্শন দিবসকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্ন দর্শন-ভাবনার মধ্যে সমন্বয় সাধন ও সমস্যা সমাধানের অভিন্ন উপায় খোঁজার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিদ্যমান সংকটের সাথে দার্শনিক চিন্তার যোগসূত্র স্থাপন করা কিংবা আদর্শিক ও নৈতিক বোঝাপড়া করার মানসেই এবারের দর্শন দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে, “Inclusive society, sustainable Planet” বা “ একীভূত সমাজ, টেকসই গ্রহ”

আজ এই বিষয়ের উপর ইউনেস্কো কর্তৃক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বিখ্যাত দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবীরা সমাগত হবেন। সেখানে তারা সামজিক ন্যায়বিচার, সংহতি, বিভিন্ন সমাজের অন্তর্ভুক্তি ও বিচ্যুতির ধারনাসহ, নারী, শিশু, সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী, নৃগোষ্ঠী, অভিবাসী, শরণার্থী এবং দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের ইস্যুগুলোর সাথে টেকসই উন্নয়নের ধরণ নিয়ে আলোকপাত করবেন। আশা করা যাচ্ছে, এতে বর্তমান সময়ের প্রধান উদ্বেগ যেমন, ধনী গরীবের বর্ধিষ্ণু অসাম্য  কিংবা সর্বব্যাপী অবক্ষয় ও পতন ঠেকানোর সম্ভাব্য নৈতিক মূলনীতি অনুসন্ধান করা হবে, এবং তা সরকারী নীতিতে গ্রহণ করার মাধ্যমে একীভূত সমাজ বিনির্মাণের প্রায়োগিক কৌশল নির্ধারণ করা হবে এছাড়া আগামী ২৬ নভেম্বর ইউনেস্কো এন্ত্রপসিন ভাবনা শীর্ষক আরও একটি গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করতে যাচ্ছে।  এতে Anthropocene নামক নতুন ঐতিহাসিক পর্যায়ে পৃথিবীকে ঠেলে দেয়ার পেছনে মানুষের যে ভূমিকা, তার দার্শনিক  প্রেক্ষাপট ও নৈতিক দায় নিয়ে আলোচনা করা হবে। মানুষের অপরিণামদর্শী  কর্মকাণ্ডের ফলে পৃথিবী এক যুগ সন্ধিক্ষণে প্রবেশ করেছে। ভূতাত্ত্বিকভাবে যে মাত্রার ধ্বংসযজ্ঞ চালালে পৃথিবীতে আমাদের সামষ্টিক মৃত্যু অবধারিত, সে মাত্রার ক্ষতি আমরা করে ফেলেছি।  বিজ্ঞানের বদৌলতে প্রকৃতির উপর মানুষের হস্তক্ষেপের ব্যাপ্তি এত বেশি যে, তা এই গ্রহের সব উদ্ভিজ, প্রাণীজ এবং খনিজ উপাদানকে বিকৃত করে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ভূগাঠনিক পরিবর্তনও ঘটে চলেছে। এই ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের মূল কারিগর মানব জাতি নিজেই। এতে করে প্রাণী, পরিবেশ ও প্রতিবেশতো বটেই, ভূগঠনের কাঠামো পরিবর্তন হওয়ার ফলে সব কিছুই তার স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে। এছাড়া মানুষ পার্শ্ববর্তী গ্রহ-নক্ষত্রের পানেও তাকাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব সৌরজগতের নানা স্তরে ও প্রান্তে গিয়ে পড়বে। মানুষের আছরে পেয়ে পৃথিবী নামক গ্রহটি একটি প্রতিবন্ধী গ্রহ-তে পরিণত হতে চলেছে। তা অবশ্যই মানুষ, পৃথিবী এবং পৃথিবীতে অবস্থানকারী সমস্ত প্রাণী ও পদার্থের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। কারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি আমাদের যত না সমস্যা সমাধান করেছে, তার বেশি নতুন সমস্যা সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞান যত রহস্য উদ্ঘাটন করেছে, তত নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাই এ বিষয়ে গভীর বোধ ও করণীয় নির্ধারণের আবশ্যিকতা রয়েছে।      
  
ইদানিং একীভূত সমাজ শ্লোগানটি বেশ জোর পেয়েছে। এর মূল তাগিদ হল, শারীরিকভাবে অক্ষম, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী, শিশু, আদিবাসী, উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু সবার প্রতিনিধিত্বমূলক  সমাজ গঠন করতে হবে। সমাজের একীভূতকরণ বলতে এমন এক প্রক্রিয়া এবং প্রচেষ্টাকে বুঝায়, যার মাধ্যমে অবস্থান নির্বিশেষে  সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা যাবে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা ও  সর্বক্ষেত্রে সক্রিয় অংশগ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলেই একীভূত সমাজ গঠন করা যাবে। কিন্তু এটি একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া। সমাজ জীবনের নানা ক্ষেত্রে ও স্তরে যে প্রতিবন্ধকতার অর্গল রয়ে গেছে, সে সব অর্গল খোলে, সবার জন্য উম্মুক্ত সুযোগ দরকার। সে সাথে পিছিয়ে পড়াদের জন্য প্রাধিকার ও প্রণোদনাও প্রয়োজন। এভাবে সবাইকে একই বলয়ে, একই গুরুত্বে নিমীলিত করা গেলেই  একীভূত সমাজ গঠন করা সম্ভবসামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জনসমাজে নিজেদের সম্পৃক্তির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণ দারিদ্র্য, বিচ্যুতি ও ঝরেপড়া রোধ করতে পারবে। ফলে তারা তাদের জীবনের পুরো সম্ভাবনাকে প্রস্ফুটিত করতে পারবে। তাই কেউ যেন তার অক্ষমতার জন্য বৈষম্যের সম্মুখীন না হয়; জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সংখ্যা ও অবস্থানের ভিত্তিতে যেন কেউ বাদ পড়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেদনাময় অভিজ্ঞতার প্রতি ইঙ্গিত করে একীভূত সমাজের আকাঙ্ক্ষা দানা বেঁধেছে। ক্ষমতাহীন, দুর্বলের, সংখ্যালঘুর, শিশুদের, নারীর, বয়স্কদের এবং পিছিয়ে পড়া নানা গোষ্ঠীকে অচ্যুতভাবে রাখার কারণে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। আবার সমাজের মূল স্রোতে মিলিত হতে না পারায় তারা বিচ্ছিন্নতা ও হতাশায় ভুগছে। এর ফলে, বঞ্চনা ও উৎপীড়নের অবসান হচ্ছে না। তাই  সমাজে প্রত্যেকের জন্য সুন্দর, সুস্থভাবে বাঁচার জায়গা নির্মাণ করতে হবে। কারণ কাউকে বাদ দিয়ে একটি সুষম সমাজ গঠন করা যায় না। সমাজে প্রত্যেকের অবদান রাখার সুযোগ আছে।  আবার সমাজের মৌলিক কাঠামোতে প্রত্যেকের সুযোগ নেয়ার এবং অধিকার ভোগ করার স্বাধীনতা থাকা বাঞ্ছনীয়। এছাড়া পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর প্রতি এগিয়ে থাকা মানুষের দায় আছে। সে দায় যেমন নৈতিক এবং ধর্মীয় দায়বদ্ধতার যায়গায়, তেমনি সে দায় আমাদের সামগ্রিক পরিণতিকে কল্যাণকর পথে ধাবমান রাখার স্বার্থেও।

এখন পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে খোদ পৃথিবীরই অস্থিত্ব। মানুষের জীবন-ঝুঁকি বহুবিধ ও বহুমাত্রিক। হোক সে জলবায়ু পরিবর্তন, রোগ, খাদ্যাভাব, খনিজ পদার্থ  কিংবা জ্বালানী ক্ষুধার কারণে। তাই বিজ্ঞান, চিকিৎসা, প্রযুক্তি এবং জটিল নগর সমাজের সমৃদ্ধি সত্ত্বেও মানুষের বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা নেই। কাজেই কদর্য, পাশবিক, ক্ষণস্থায়ী জীবনের বাধা অতিক্রমণের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে আগাম বলতে পারার সক্ষমতাসহ বিজ্ঞান প্রসূত উচ্চতর আবিস্কারগুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় ভেবে দেখা হচ্ছে। যে ধরণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মডেল, আমাদের মনোভঙ্গি ও আচরণের ধরণ নির্মাণ করেছে তা অমঙ্গল ডেকে আনার সম্ভাবনায় দুষ্ট এবং প্রশ্নবিদ্ধ। মূলত এই মডেলগুলোকে আরও কীভাবে প্রকৃতির স্বভাবের সাথে লাগসই ও চলনসই করা যায় এখন সে প্রচেষ্টা চলছেপ্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বৈজ্ঞানিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে যে ক্ষতি আমরা ইতোমধ্যে করেছি, তাকে কীভাবে আরও অধিকতর কল্যাণকর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মোকাবেলা করা যায় সে উপায় বের করতে হবে।

মনুষ্য সৃষ্ট ব্যবস্থা এবং প্রভাবের দ্বারা প্রকৃতির, বিশেষ করে পৃথিবীর যে পরিবর্তন, এবং সে পরিবর্তনঘটিত যে হুমকি আমাদেরই উপর আবির্ভূত হয়েছে তা মোকাবেলা করার জন্য সামাজিক বিজ্ঞানের জায়গা থেকে আমাদের অর্থনৈতিক মডেল, ভোগবাদীতা, জ্বালানী উৎপাদনের পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য সংরক্ষণের উপায় নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে তথ্য, উপাত্তকে ব্যবহার করে মানুষের প্রভাব নির্ণয় করা এবং তার সম্ভাব্য পরিণতিগুলো শনাক্ত করা এখন অনেকটা সহজ হয়েছে। ফলে যে কোন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপের আগে এর ভাল-মন্দের তুলনামূলক বিচার করা যাবে। তাই ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রভাবের মূল্যায়ন ব্যতীত নির্বিচারে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করা অনুচিত। অন্যদিকে,  জীবন ও প্রাণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকাটা এখন নৈতিকতার দাবী। কারণ এই পৃথিবী নামক গ্রহের মালিক শুধু মানুষ নয়। অন্যান্য জীব বা প্রাণ স্বত্ত্বার অস্থিত্বকে বিপন্ন করে মানুষের সর্বগ্রাসী উৎপীড়নের কারণে পুরো পৃথিবী বিপন্ন হয়ে পড়েছে    

মানুষ বিশ্বব্যাপী মারাত্বক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। রোগ-ব্যাধি প্রতিনিয়ত নবরূপে আবির্ভূত হচ্ছে কিংবা বিবর্তিত হচ্ছে। Bio-violation বা জেনেটিক দূষণের কারণে মানুষের খাদ্য এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি নতুন মাত্রা লাভ করেছে। প্রযুক্তির অপরিণামদর্শী ব্যবহার এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে অপবিজ্ঞানের অন্যায্য অনুপ্রবেশকে সামাজিক বিজ্ঞানের নিক্তিতে পরিমাপ করে, দার্শনিক বিবেচনার মানদণ্ডে মূল্যায়ন করে দূরদর্শী  নীতি নির্ধারণ করা দরকার। সেক্ষেত্রে, দর্শন আমাদের এমন একটি সক্ষমতার জায়গা বা স্পেস দেয় যেখান থেকে বিদ্যমান জ্ঞান জগতের সামগ্রিক পর্যালোচনার মাধ্যমে জেনে, শুনে, বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারার, সর্বোপরি অগ্রাধিকার ও পছন্দ বাছাই করতে পারার দৃষ্টিকোণ নির্মাণ করা যায়। জ্ঞানকাণ্ডের বিচ্ছিন্ন বীক্ষণ থেকে উৎসারিত একচোখা দৃষ্টিদোষ সংশোধনের জন্য দর্শনের চেয়ে সঞ্জীবনী দাওয়াই আর নেই তাই নিছক অপরিণামদর্শী  লোভ তাড়িত হয়ে মিথ্যে স্বার্থের পিছনে না ছুটে আমাদের এখনি থামতে হবে। ভাবতে হবে সত্যকে জানার জন্য, পরিণতি বুঝার জন্য। নতুন যুগের নতুন চ্যালেঞ্জকে শুধু অর্থনীতির বাটখারায় না মেপে দার্শনিক উপলব্ধির প্রিজমে দেখার মাধ্যমে আমাদের যূথবদ্ধ অঙ্গীকারের পাটাতনে দাঁড়াতে হবে, যেন একীভূত সমাজ ও টেকসই গ্রহ নিশ্চিত করতে পারি।

Comments

Popular posts from this blog

মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার

সরওয়ার কামাল শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় ভালো, যা সম্পর্কে প্রশংসা করে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রবন্ধ লিখেছেন “ ল্যানসেট ” নামক মেডিক্যাল জার্নালে। কিন্তু এতে আমাদের বগল বাজিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়া এবং বিজ্ঞান শিক্ষা সংকুচিত হয়ে পড়া আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণে আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্যগুলো হাসিল হচ্ছে না, যার একটি হলো সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, অপরটি হলো শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা। অর্থাৎ সব শিশুই যাতে সরকারের সুযোগ ব্যবহার করে উন্নত জীবনের সন্ধান করতে পারে, তার শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, তার মধ্যে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রধান কারণ দারিদ্র্য ও অপুষ্টি বা স্বাস্থ্যহীনতা । মাধ্যমিক পর্যায়েও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে দারিদ্র্য সমস্যার ...

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনা জালে

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনা জালে ............................................................................... সাম্প্রতিক কালে আমাদের নৈতিক উপলব্ধিতে, সামাজিক উদ্বেগে কিংবা মূল্যবোধে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। প্রযুক্তির নিবিড় ব্যবহার, বিশ্বায়নের প্রভাব, বিশ্বরাজনীতির অভিঘাত, বাজার সংস্কৃতির ধাক্কা ও চরমপন্থী ভাবাদর্শের টানাপড়েনে আমাদের চিরকালীন মূল্যবোধ ভেঙ্গে পড়েছে। নৈতিকতার সীমানা সরে যাচ্ছে প্রথাগত বিশ্বাস ও প্রতিষ্ঠানসংলগ্নতা থেকে। গতিময় জীবনের অভিঘাতে চরম অস্থিরতা ব্যক্তি থেকে ব্যষ্টির ব্যাপ্তিতে বিরাজ করছে। সর্বত্র আহাজারি, শোনার অবসর নিয়ে হাজির নেই কেউ। মানুষ যে নির্বিকার তাও নয়, তারা বিকারগ্রস্থ, পূর্ণমাত্রায় ঘোরগ্রস্থ, কেবল অপ্রত্যাশিত ঘটনাপ্রবাহের সাথে তাল মেলানোতে। তারা এখন এমন সব বিষয়ে আলোড়িত হয়, যে বিষয়ের সাথে তাদের সরাসরি যোগ নেই। থাকলেও তা অনেক ক্ষীণ ও দূরবর্তী কার্যকারণ সম্পর্কে আবদ্ধ। একইভাবে, তারা এমন সব পরিণতি ভোগ করে, যার জন্য তারা নিজেরা দায়ী নয়। আর যারা দায়ী তারা এর পরিণতি ভোগ করেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ বয়সের দিকে এই প্যার...

মহেশখালীর সমাজ ও সংস্কৃতি

সরওয়ার কামাল সাগর কূলে গিরিকুন্তলা মোহিনী মহেশখালী দ্বীপের ৩৮৮ বর্গকিলোমিটার ভূত্বকে প্রায় পাঁচ লক্ষ লোকের বসতি। তাদের বসতি ঘিরে গড়ে উঠেছে উপকূলীয়-দ্বীপাঞ্চলীয় সমাজ। এই সমাজসভ্যদের মানসিক ঐক্য ও জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হয়েছে শনাক্তযোগ্য বিশেষ স্থানীয় সংস্কৃতি। মানবজাতির চিরকালীন অভিযাত্রার অংশ হিসেবে দেশের নানা জায়গা থেকে হিজরত করে লোকজন এসে বসতি গেড়েছে মহেশখালীতে। তাই তাদের ভাষা ও আচরণে শনাক্ত করা যায় এমন বৈচিত্র্য ও তারতম্য, যা দিয়ে কক্সবাজারের অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের তুলনায় মহেশখালীবাসীকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করা যায়। যে পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ঠ্যাবলী নিয়ে মহেশখালীর সমাজ ও মানুষের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য তৈরি হয়েছে, চাটগাঁইয়া ভাষার উপভাষাতুল্য মহেশখালীর দ্বীপাঞ্চলীয় বুলি তার মধ্যে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। [1] তবে সমস্যা হলো, লিখিত সাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অভাবে স্থানীয় ইতিহাসের মতোই কালিক সূচকের নিরিখে এর জনসংস্কৃতি বর্ণনা করা দুরূহ। একেতো সংস্কৃতি স্বয়ং একটি ব্যাপক ধারণা, তদুপরি, এটি সতত পরিবর্তনশীল। ভাষা ও সংস্কৃতি স্রোতস্বী নদীর মতো বহমান। মানুষের কথা, স্মৃতি, পুরা...