মৌর্য আমলা কিংবা মোঘল আমলা নিয়ে এতদাঞ্চলে খুব কম লোকেরই আগ্রহ আছে। যে
কয়জন এদের খোঁজ রাখেন এবং ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি রাখেন তারা ঐতিহাসিক দায়ে
পড়ে নয়, নিজ পেশার কুলজি বিচারের তাগিদেই রাখেন। এভাবে প্রাচীন
আমলাতন্ত্রের সাথে ঐতিহাসিক বিচ্ছেদজনিত কারণে সাধারণের মাঝে এক ধরনের
আমলাবিরোধি মনোভাব আছে। একইভাবে শিক্ষিতজনের চেতনায় ও জনপরিসরেও
আমলাতন্ত্রের প্রতি বিবেচনাহীন মনস্তাত্ত্বিক বৈরিতা দেখা যায়, যার প্রধান
উৎস ঔপনিবেশিক ডিসকোর্স ও উত্তর-ঔপনিবেশিক জ্ঞান চর্চার সামাজিক
তত্ত্ববিদ্যা ( Social Ontology)। এই ধরনের অদৃশ্য বিরোধের দেয়াল ডিঙিয়ে
নিরপেক্ষভাবে আমলাতন্ত্রের ঐতিহাসিক স্বরূপ অনুধাবনের স্বার্থে কেউ পেছনের
কিংবা ভেতরের খবর রাখার মেহনত করেন না। ছিটেফোঁটা হলেও, কেবল আমলারাই
আমলাদের খবর রাখেন। একাডেমিক পর্যায় থেকে যারা আমলাতন্ত্র, জনপ্রশাসন ও
জনসেবা নিয়ে লেখালেখি করেন তারা লিটারেচার রিভিউর প্রয়োজন মেটানোর জন্য
মেকুলের মাইনিউট, স্বরাজকামি যুবকদের শ্লোগান ও অপরিণামদর্শী বিপ্লবের (
বিস্তারিত দেখুন-নিরদ চন্দ্র চৌধুরীর দ্য অটোবায়োগ্রাফি অব এন আননৌন
ইন্ডিয়ান) মন্ত্র পাঠ করে ইংরেজ বিরোধীতার সমস্ত ক্ষোভ আইসিএস অফিসারদের
ওপর ঝাড়েন। স্বাধীনতা সংগ্রামে চিহ্নিত শত্রু ও প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংরেজ,
সেই সাথে ইংরেজ শাসনের প্রধান এজেন্ট আইসিএস কর্তাদের প্রতি পুঞ্জিভূত
ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে থাকেন। এর বাইরে লোকপ্রিয় বয়ান তৈরির নিরাপদ অঞ্চল
হিসেবে পরিচিত সাহিত্যের, বিশেষ করে কল্পকাহিনীর বদৌলতে উপনিবেশ বিরোধী
গল্প, কবিতা, উপন্যাস এবং নাটকের সামষ্টিক চরিত্রচিত্রণ প্রয়াসের মাধ্যমে
উপনিবেশ বিরোধী সেন্টিমেন্ট উস্কে দেয়া হয়েছে, যার প্রধান প্রতিপক্ষ ইংরেজ ও
ইংরেজ আমলের আমলাতন্ত্র। যদিও গবেষকরা মজা করে বলে থাকেন, ভারতবর্ষ সবচেয়ে
স্বাধীন ছিলো শুধু ব্রিটিশ উপনিবেশের কালেই।
ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির হাতে বাংলার শাসনভার যাওয়ার পর ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক কালেক্টর পদ সৃজন করা হলে এবং পরবর্তীতে মুঘল সুবেদার পদের অনুকরণে রাজস্ব, প্রশাসন ও বিচারের ভার একই পদের বিপরীতে ন্যস্ত করে পদটিকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করা হলে, সেই পদে পদায়িত আইসিএস অফিসারদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে আইসিএস অফিসারদের ভারতীয় বিদ্যা, ভাষা ও সংস্কৃতি শেখানোর দায় নিয়ে প্রাচ্যবিদ উইলিয়াম জোনস যখন ইংরেজিতে ভারতীয় ক্লাসিকগুলো অনুবাদে হাত দেন, তখন অনেকেই বিলেতি জোনসের মুখে ভারতীয় বিদ্যার ঝাল খাওয়াকে বিরক্তিকর গণ্য করেছিলেন। জোনসের ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে (১৮০০ সালে) গিয়ে আইসিএস অফিসারদের ভারতীয় বিদ্যায় প্রশিক্ষণ নিতে হতো। পরে অবশ্য উপনিবশিক প্রশাসনের আইসিএস অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স এন্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স, সোয়াসসহ বেশ কিছু বিদ্যা বিতরণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুধু তাই নয় আইসিএস অফিসাররা ভারতীয় উপমহাদেশের ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, বিজ্ঞান, প্রশাসন থেকে শুরু করে ধর্ম পর্যন্ত প্রতিটি জ্ঞানকাণ্ডে নবপ্রাণের ছোঁয়া দেন। তবুও আইসিএসদেরকে, সেই সাথে তাদের জ্ঞানার্জনের ধরনকে অপর গণ্য করার মাধ্যমে উত্তর-ঔপনিবেশিক জ্ঞানের রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তার বস্তুনিষ্টতা সম্পর্কেও আগাগোড়া সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে।
আমলা বিরোধী মনোভাবের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উৎস পরশ্রীকাতরতা ও হীনমন্যতা। ব্রিটিশ আমলে যারা আইসিএস অফিসার হতে পারেননি কিংবা আইসিএসদের মোকাবেলা করতে গিয়ে বিদ্যা দৈন্যতার কারণে অসহায়ত্বে ভোগেছেন তাদের মধ্যে হীনমন্যতাজাত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে। আইসিএস নিয়ে জওহরলাল নেহরু যখন বিদ্রুপ করে বলেন, "দুর্ভাগ্যবশত এই দেশে যা ( আইসিএস) নিয়ে আমরা এখনো ভুগছি, তা না ইন্ডিয়ান, না সিভিল আর না সেবা", তখন অনেকেই সেই বিদ্রুপকে ঐতিহাসিক বিচার মান্য করে উপনিবেশ বিরোধিতার বর্ধিত প্রকল্পের শ্লোগান আকারে গ্রহণ করেন। অথচ এই মন্তব্যের প্রেক্ষিত বিচার না করে একে পাইকারি হারে ব্যবহার করার মাধ্যমে তারা আত্মপ্রেমের গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খান।
সেই সময়ের সেরা শিক্ষকদের বাসায় রেখে শাস্ত্রীয় জ্ঞানে দক্ষ করে তোলা আদরের একমাত্র ছেলেকে মতিলাল নেহরু তিরাশি জন চাকরের সার্বক্ষণিক সেবা হতে বঞ্চিত করে সুদূর বিলেতে পাঠিয়েছিলেন ব্যারিস্টার বানানোর জন্য নয়, আইসিএস অফিসার বানানোর জন্য। কারণ সেকালে আইসিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য বিলেতি ডিগ্রি লাগতো, য়ুরোপীয় ক্লাসিক জানা লাগতো। কিন্তু জ্ঞান বেশি থাকলে ছেলেরা যেরকম পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করে, নেহরুও সহপাঠীদের চেয়ে মেধা ও পঠনপাঠনে এগিয়ে থাকায় ক্যাম্ব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তৃপ্তি পাননি। ফলে আশানুরূপ কৃতিত্ব দেখাতে না পেরে আইসিএস হওয়ার পথে যেতে পারেননি। শেষে পিতার আদেশে একটা ব্যারিস্টারি ডিগ্রি নিয়ে ওকালতি পেশায় নাম লিখিয়েছিলেন।
পণ্ডিত নেহরুর পাণ্ডিত্য ও যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু স্বঘোষিত আমলাবিরোধিরা আইসিএস অফিসার হওয়াকে ঔপনিবেশিক মানসিকতার পরিচায়ক বলে গণ্য করলেও ব্যারিস্টার হওয়াকে ঔপনিবেশিকতা দোষে দুষ্ট মনে করেননি। কাজেই ব্যারিস্টারির মতো একটা ছোট ডিগ্রিকে এখনো পর্যন্ত যত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় এবং অযথা অতিসম্মানের সাথে দেখা হয়, তা তথাকথিত উপনিবেশ বিরোধীদের আসল ঔপনিবেশিক মানসিকতাকে উন্মোচিত করে।
সুভাষচন্দ্র বোস আইসিএস ছেড়েছিলেন অন্য কারণে। তা জানতে ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন দাসের কাছে লেখা তার চিঠির মর্ম বুঝতে হবে। তিনি চেয়েছিলেন, চিত্তরঞ্জন দাসের সহযোগী রাজনীতিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবেন। তিনি দেশবন্ধুর সাথে ফরওয়ার্ড পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, রাজনীতি করেছেন কিন্তু তার কাঙ্ক্ষিত ‘স্বরাজ’ অর্জনের আগেই অন্তরালে চলে যান। ফলে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে নতুন করে আমলাতন্ত্র গঠনের সম্ভাব্য রূপরেখা কী হতে পারে তা নকশায়িত করার আগেই বোসের অন্তর্ধানের ফলে আমলাতন্ত্রের বি-উপনিবেশিতকরণ ঘটেনি।
স্যার সৈয়দ আহমদ খানের কাছ থেকে ধার করে জিন্নাহ কর্তৃক উপস্থাপিত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতাত্তোর দেশ বিভাগের সময় তৎকালীন পূর্ববাংলায় কর্মরত আইসিএস অফিসাররা ভারতে চলে যান। তবে চলে যাওয়ার সময় প্রশাসনিক অবকাঠামো ভেঙ্গেচুরে, চেয়ার টেবিল থেকে শুরু করে ওয়াশরুমের লুকিং গ্লাস পর্যন্ত ব্যাগে ভরে নিয়ে যান ( দেখুন, আহমেদ কামাল রচিত ‘স্টেট এগেইন্সট দ্য নেইশান’)। এর ফলে আমলাতন্ত্রের দীর্ঘসূত্রিতা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, জটিল কর্মবিভাজন জনিত প্রশাসনিক স্থবিরতা এবং অফিসারদের আত্মম্ভরি স্বভাবের সাথে লুকিং গ্লাস খোলে নেয়ার মতো ছোটলোকি জনমানসে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করে। পাকিস্থান আমলে আমলারা মন্ত্রীদের কার্যত উপদেষ্টা এবং পাকিস্থানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে সুসম্পর্কের সুবাদে কখনো মন্ত্রীর চেয়েও দাপট দেখালে স্বাধীনচেতা নেতা ও সেবা প্রত্যাশী নাগরিকদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির হাতে বাংলার শাসনভার যাওয়ার পর ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক কালেক্টর পদ সৃজন করা হলে এবং পরবর্তীতে মুঘল সুবেদার পদের অনুকরণে রাজস্ব, প্রশাসন ও বিচারের ভার একই পদের বিপরীতে ন্যস্ত করে পদটিকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করা হলে, সেই পদে পদায়িত আইসিএস অফিসারদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে আইসিএস অফিসারদের ভারতীয় বিদ্যা, ভাষা ও সংস্কৃতি শেখানোর দায় নিয়ে প্রাচ্যবিদ উইলিয়াম জোনস যখন ইংরেজিতে ভারতীয় ক্লাসিকগুলো অনুবাদে হাত দেন, তখন অনেকেই বিলেতি জোনসের মুখে ভারতীয় বিদ্যার ঝাল খাওয়াকে বিরক্তিকর গণ্য করেছিলেন। জোনসের ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে (১৮০০ সালে) গিয়ে আইসিএস অফিসারদের ভারতীয় বিদ্যায় প্রশিক্ষণ নিতে হতো। পরে অবশ্য উপনিবশিক প্রশাসনের আইসিএস অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স এন্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স, সোয়াসসহ বেশ কিছু বিদ্যা বিতরণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুধু তাই নয় আইসিএস অফিসাররা ভারতীয় উপমহাদেশের ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, বিজ্ঞান, প্রশাসন থেকে শুরু করে ধর্ম পর্যন্ত প্রতিটি জ্ঞানকাণ্ডে নবপ্রাণের ছোঁয়া দেন। তবুও আইসিএসদেরকে, সেই সাথে তাদের জ্ঞানার্জনের ধরনকে অপর গণ্য করার মাধ্যমে উত্তর-ঔপনিবেশিক জ্ঞানের রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তার বস্তুনিষ্টতা সম্পর্কেও আগাগোড়া সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে।
আমলা বিরোধী মনোভাবের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উৎস পরশ্রীকাতরতা ও হীনমন্যতা। ব্রিটিশ আমলে যারা আইসিএস অফিসার হতে পারেননি কিংবা আইসিএসদের মোকাবেলা করতে গিয়ে বিদ্যা দৈন্যতার কারণে অসহায়ত্বে ভোগেছেন তাদের মধ্যে হীনমন্যতাজাত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে। আইসিএস নিয়ে জওহরলাল নেহরু যখন বিদ্রুপ করে বলেন, "দুর্ভাগ্যবশত এই দেশে যা ( আইসিএস) নিয়ে আমরা এখনো ভুগছি, তা না ইন্ডিয়ান, না সিভিল আর না সেবা", তখন অনেকেই সেই বিদ্রুপকে ঐতিহাসিক বিচার মান্য করে উপনিবেশ বিরোধিতার বর্ধিত প্রকল্পের শ্লোগান আকারে গ্রহণ করেন। অথচ এই মন্তব্যের প্রেক্ষিত বিচার না করে একে পাইকারি হারে ব্যবহার করার মাধ্যমে তারা আত্মপ্রেমের গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খান।
সেই সময়ের সেরা শিক্ষকদের বাসায় রেখে শাস্ত্রীয় জ্ঞানে দক্ষ করে তোলা আদরের একমাত্র ছেলেকে মতিলাল নেহরু তিরাশি জন চাকরের সার্বক্ষণিক সেবা হতে বঞ্চিত করে সুদূর বিলেতে পাঠিয়েছিলেন ব্যারিস্টার বানানোর জন্য নয়, আইসিএস অফিসার বানানোর জন্য। কারণ সেকালে আইসিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য বিলেতি ডিগ্রি লাগতো, য়ুরোপীয় ক্লাসিক জানা লাগতো। কিন্তু জ্ঞান বেশি থাকলে ছেলেরা যেরকম পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করে, নেহরুও সহপাঠীদের চেয়ে মেধা ও পঠনপাঠনে এগিয়ে থাকায় ক্যাম্ব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তৃপ্তি পাননি। ফলে আশানুরূপ কৃতিত্ব দেখাতে না পেরে আইসিএস হওয়ার পথে যেতে পারেননি। শেষে পিতার আদেশে একটা ব্যারিস্টারি ডিগ্রি নিয়ে ওকালতি পেশায় নাম লিখিয়েছিলেন।
পণ্ডিত নেহরুর পাণ্ডিত্য ও যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু স্বঘোষিত আমলাবিরোধিরা আইসিএস অফিসার হওয়াকে ঔপনিবেশিক মানসিকতার পরিচায়ক বলে গণ্য করলেও ব্যারিস্টার হওয়াকে ঔপনিবেশিকতা দোষে দুষ্ট মনে করেননি। কাজেই ব্যারিস্টারির মতো একটা ছোট ডিগ্রিকে এখনো পর্যন্ত যত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় এবং অযথা অতিসম্মানের সাথে দেখা হয়, তা তথাকথিত উপনিবেশ বিরোধীদের আসল ঔপনিবেশিক মানসিকতাকে উন্মোচিত করে।
সুভাষচন্দ্র বোস আইসিএস ছেড়েছিলেন অন্য কারণে। তা জানতে ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন দাসের কাছে লেখা তার চিঠির মর্ম বুঝতে হবে। তিনি চেয়েছিলেন, চিত্তরঞ্জন দাসের সহযোগী রাজনীতিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবেন। তিনি দেশবন্ধুর সাথে ফরওয়ার্ড পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, রাজনীতি করেছেন কিন্তু তার কাঙ্ক্ষিত ‘স্বরাজ’ অর্জনের আগেই অন্তরালে চলে যান। ফলে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে নতুন করে আমলাতন্ত্র গঠনের সম্ভাব্য রূপরেখা কী হতে পারে তা নকশায়িত করার আগেই বোসের অন্তর্ধানের ফলে আমলাতন্ত্রের বি-উপনিবেশিতকরণ ঘটেনি।
স্যার সৈয়দ আহমদ খানের কাছ থেকে ধার করে জিন্নাহ কর্তৃক উপস্থাপিত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতাত্তোর দেশ বিভাগের সময় তৎকালীন পূর্ববাংলায় কর্মরত আইসিএস অফিসাররা ভারতে চলে যান। তবে চলে যাওয়ার সময় প্রশাসনিক অবকাঠামো ভেঙ্গেচুরে, চেয়ার টেবিল থেকে শুরু করে ওয়াশরুমের লুকিং গ্লাস পর্যন্ত ব্যাগে ভরে নিয়ে যান ( দেখুন, আহমেদ কামাল রচিত ‘স্টেট এগেইন্সট দ্য নেইশান’)। এর ফলে আমলাতন্ত্রের দীর্ঘসূত্রিতা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, জটিল কর্মবিভাজন জনিত প্রশাসনিক স্থবিরতা এবং অফিসারদের আত্মম্ভরি স্বভাবের সাথে লুকিং গ্লাস খোলে নেয়ার মতো ছোটলোকি জনমানসে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করে। পাকিস্থান আমলে আমলারা মন্ত্রীদের কার্যত উপদেষ্টা এবং পাকিস্থানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে সুসম্পর্কের সুবাদে কখনো মন্ত্রীর চেয়েও দাপট দেখালে স্বাধীনচেতা নেতা ও সেবা প্রত্যাশী নাগরিকদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
Comments