বৈচিত্র্য
ও সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদকে সমাজ দার্শনিক ও নৃবিজ্ঞানীরা বরাবরই উৎসাহ দিয়ে
থাকেন এবং মানুষের পরিচয় বিনির্মাণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
পরিচয়ের বহুত্ববাদি সংজ্ঞা দানের ক্ষেত্রে অমর্ত্য সেন কিংবা নাগরিকদের
কসমোপলিটান অধিকার বিষয়ক সামাজিক অন্টোলজি চর্চা ও ডিসকোর্স বিশ্লেষণের
ক্ষেত্রে খোমে এন্থনি আপিয়াহ, উভয়ই উদার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমাজের
বৈচিত্র্যকে বিবেচনায় নিয়ে বৈচিত্র্যের লাগসই সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য
প্রয়োজনীয় নৈতিক ও আইনি পরিসর যোগানোর পক্ষে যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। বর্তমান
যুগে সামাজিক-সাংস্কৃতিক গতিময়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা কিছুতেই বৈচিত্র্যের
সমাবেশ ঘটতে দেখা যায়। আঞ্চলিকতা, পেশা, অর্থনৈতিক অবস্থা, ভাষা, ধর্ম,
বর্ণ, জাতীয়তা, আধ্যাত্মিকতা, লিঙ্গ, যৌনতা, ভাবাদর্শ, বয়স, অক্ষমতা,
নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজে বসবাসকারি মানুষের মধ্যে
কিংবা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে বৈচিত্র্য থাকতে পারে। সমাজে এই বৈচিত্র্যকে
হজম করতে গেলে প্রয়োজন সহনশীলতা। বিপরীত মত ও বৈচিত্র্যের প্রতি পারস্পরিক
শ্রদ্ধা।
বৈচিত্র্যের প্রতি সহনশীলতা এমন কোন বায়বীয় জিনিস নয় যা সভ্য সমাজের পাড়ায় পাড়ায় দখিনা হাওয়ার মতো কেবল প্রশান্তির পরশ দিয়ে বেড়ায়। সমাজে ও প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের বৈচিত্র্যের সমাবেশ অনেকগুলো নৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। বৈচিত্র্যকে হজম করতে গেলে অনুভবযোগ্য নৈতিক পরিসর দরকার, যার একটি নৈতিক ভিত্তি থাকা অনিবার্য। এই ধরনের সামাজিক নৈতিকতা বিচারের দুইটি ধারা আছে, একটি ধর্মীয়, অপরটি নন্দনতাত্ত্বিক। কর্মের ভাল-মন্দ, ঠিক-বেঠিক, ঔচিত্য-অনুচিত্য বিচারের ক্ষেত্রে মানুষ ভালো কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তিতে বিশ্বাস রাখে, যা ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে ন্যায্যতা পায়। ধর্মের বাইরেও ভালো-মন্দের বা কাজের নৈতিক মূল্য বিচারের অবকাশ আছে। ধর্মবিযুক্ততার জায়গা থেকে নন্দনতাত্ত্বিক মূল্য বিনিময়ের মাধ্যমে একে নৈতিক মূল্যে রূপান্তর করে ভালো-মন্দ বিচার করা সম্ভব। সমাজে চালু থাকা এই দুই ধরনের মানদণ্ডের ভিত্তিতে সমাজের রীতিনীতি, প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক আদবকায়দা চালু হয়েছে। এই যে নানাকিসিমের বৈচিত্র্য তা সমাজে প্রচলিত মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। যেমন একটি অফিসে বাংলা মিডিয়াম থেকে পাস করা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আর ইংলিশ মিডিয়াম থেকে পাস করা উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে যদি কাজে যোগ দান করে তাদের আচরণ একই নৈতিক মানদণ্ডে বিচার করা যাবে না। একজন ইংরেজি বলতে আনন্দ পায়, আরেকজন বাংলা। একজনের কাছে ক্রিকেটদেখা বিনোদন, অন্যজনের কাছে ক্রিকেট নিয়ে অতি হৈচৈ করা পাবলিক নুইস্যান্স। একজনের নাস্তা পিজ্জা, আরেকজনের সিংগারা। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এই ক্ষেত্রে অফিসের এটিকেট কী হবে? যত বৈচিত্র্যকে আমরা একমোডেট করবো, মানুষের কাছে প্রত্যাশিত আচরণের নৈতিক মানদণ্ড তত বদলে যাবে। বদলাতে বদলাতে একটা পর্যায় এমন হবে সমাজের মূল চরিত্রে টান পড়বে। পরিশেষে নৈতিক আপেক্ষিকতার দোহাই দিয়ে বহুত্ববাদি এটিকেট চালু করার দাবি আসবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার নৈতিক কৌশল বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে কাজের ঔচিত্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দেবে এবং নৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
সমাজের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। সমাজ যখন কোন কাজটি ঠিক হচ্ছে আর কোন কাজটি ঠিক হচ্ছে না, সেটা বিচার করার সক্ষমতা অর্জন করে, তখন তাকে আমরা নৈতিক উন্নয়ন বলি। এই নৈতিক উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সমাজ রাতারাতি নৈতিকভাবে উন্নত হয় না। সমাজে বসবাসকারি মানুষের সাধারণ অভিজ্ঞতা ও নৈতিকতা চর্চার ভেতর দিয়ে সমাজের নৈতিক সক্ষমতা গড়ে ওঠে। তো এতোদিন সমাজের নৈতিক উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা মনে করা হতো নৈতিক আপেক্ষিকতাকে। সেই প্রোটাগোরাসের আমল থেকে দার্শনিকরা নৈতিক আপেক্ষিকতা স্বীকার করে আসছেন। বিংশ শতাব্দিতে এসে ফ্রানয বোয়াস এবং ক্লিফোর্ড গীয়ার্জদের মতো নৃবিজ্ঞানিরা ভিন্ন ভিন্ন কৌমসমাজের সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতার সাথে নৈতিক আপেক্ষিকতার বৈধতা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে মানুষের একটি প্রধান অধিকার হিসেবে দাবি করেছেন। কিন্তু সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে। নৈতিক স্থবিরতাকে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের একটি বিকৃত পরিণতি হিসেবেও দেখা যেতে পারে। ব্যক্তি, সমাজ, সংস্কৃতি, প্রথা ও প্রতিষ্ঠানভেদে মূল্যবোধের ভিন্নতা রয়েছে বলে যে যার মতো করে নৈতিক মানদণ্ড নির্ধারণ করে তা দ্বারা ভালমন্দ, ঠিক বেঠিক, ঔচিত্য- অনুচিত্য বিচার করছে। এ কারণে সমাজের নৈতিক প্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একজনের কাছে মদ খাওয়া ভাল আরেক জনের কাছে মদ খাওয়া খারাপ। একজনের কাছে সুদ খাওয়া ঠিক, আরেক জনের কাছে সুদ খাওয়া বেঠিক। একজনের কাছে মুক্তবাজার কাম্যতো আরেক জনের কাছে নিয়ন্ত্রিত বাজার কাম্য। একজনের কাছে কোটাপ্রথা ন্যায্য, আরেক জনের কাছে কোটাপ্রথা অন্যায্য। সমকামিতাকে কেউ অপরাধ মনে করে, আবার কেউ অধিকার মনে করে। এভাবে নৈতিক আপেক্ষিকতা অনেকটা নৈতিক নৈরাজ্য তৈরি করছে।
ইদানিং নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদের চেয়েও বড় বাধা মনে করা হচ্ছে সেনসেশানকে। হঠাৎ কোন একটা বিষয় নিয়ে সমাজে যখন অতিমাত্রায় সেনসেশান তৈরি হয় তখন মানুষের মধ্যে নৈতিক বিচারবোধ কাজ করে না। সে কারণে সেনসেশান তৈরি করাকে মোরাল ক্রাইম বা নৈতিক অপরাধ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। কথা হচ্ছে সমাজে নৈতিকবোধ বিলোপকারি সেনসেশান কীভাবে তৈরি হয়, আর কী নিয়ে তৈরি হয় তা না জানলে মানুষ কীভাবে জানবে যে সে একটি অপরাধ করেছে? সমাজে নানা ইস্যু নিয়ে সেনসেশান তৈরি হতে পারে। মাদক, প্রেম, টিভি সিরিয়াল, ক্রিকেট, চাঞ্চল্যকর অপরাধ, আন্তর্জাতিক সংঘাত, পুঁজিবাজার, নতুন ফ্যাশনের পোষাক, নতুন প্রযুক্তি, নতুন খাবারসহ আরো নানাকিছু নিয়ে সেনসেশন হতে পারে বা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, যারা ক্রিকেট নিয়ে অতি মাত্রায় আগ্রহী তারা ক্রিকেটের প্রতি অতিআসক্তিকে স্বদেশপ্রেম হিসেবে জাহির করে, কর্পোরেট কোম্পানির বিজ্ঞাপনের জিংগেলকে দেশাত্মবোধক গান মনে করে গায় এবং জাতীয়তাবোধ তৈরির ইতিহাস, ঐতিহ্য, চিহ্ন, ভাষা, শব্দ, মোটিফগুলোর বাণিজ্যিক ব্যবহারে সহায়তা করে। এভাবে গরীবলোকের ইস্যুগুলোকে পাবলিক স্ফেয়ার থেকে দূরীভূত করতে ভূমিকা রাখে, সর্বোপরি অসহায় মানুষের দুর্যোগের প্রতি অনুভূতিশীলতাকে জোর পূর্বক ভোতা করে রাখার জন্য ক্রিকেটকে ড্রাগ হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে সমাজের এবং সমাজে বসবাসকারি ব্যক্তিবর্গের নৈতিকবোধকে অকার্যকর রাখতে ভূমিকা রাখে।
বৈচিত্র্যের প্রতি সহনশীলতা এমন কোন বায়বীয় জিনিস নয় যা সভ্য সমাজের পাড়ায় পাড়ায় দখিনা হাওয়ার মতো কেবল প্রশান্তির পরশ দিয়ে বেড়ায়। সমাজে ও প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের বৈচিত্র্যের সমাবেশ অনেকগুলো নৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। বৈচিত্র্যকে হজম করতে গেলে অনুভবযোগ্য নৈতিক পরিসর দরকার, যার একটি নৈতিক ভিত্তি থাকা অনিবার্য। এই ধরনের সামাজিক নৈতিকতা বিচারের দুইটি ধারা আছে, একটি ধর্মীয়, অপরটি নন্দনতাত্ত্বিক। কর্মের ভাল-মন্দ, ঠিক-বেঠিক, ঔচিত্য-অনুচিত্য বিচারের ক্ষেত্রে মানুষ ভালো কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তিতে বিশ্বাস রাখে, যা ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে ন্যায্যতা পায়। ধর্মের বাইরেও ভালো-মন্দের বা কাজের নৈতিক মূল্য বিচারের অবকাশ আছে। ধর্মবিযুক্ততার জায়গা থেকে নন্দনতাত্ত্বিক মূল্য বিনিময়ের মাধ্যমে একে নৈতিক মূল্যে রূপান্তর করে ভালো-মন্দ বিচার করা সম্ভব। সমাজে চালু থাকা এই দুই ধরনের মানদণ্ডের ভিত্তিতে সমাজের রীতিনীতি, প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক আদবকায়দা চালু হয়েছে। এই যে নানাকিসিমের বৈচিত্র্য তা সমাজে প্রচলিত মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। যেমন একটি অফিসে বাংলা মিডিয়াম থেকে পাস করা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আর ইংলিশ মিডিয়াম থেকে পাস করা উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে যদি কাজে যোগ দান করে তাদের আচরণ একই নৈতিক মানদণ্ডে বিচার করা যাবে না। একজন ইংরেজি বলতে আনন্দ পায়, আরেকজন বাংলা। একজনের কাছে ক্রিকেটদেখা বিনোদন, অন্যজনের কাছে ক্রিকেট নিয়ে অতি হৈচৈ করা পাবলিক নুইস্যান্স। একজনের নাস্তা পিজ্জা, আরেকজনের সিংগারা। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এই ক্ষেত্রে অফিসের এটিকেট কী হবে? যত বৈচিত্র্যকে আমরা একমোডেট করবো, মানুষের কাছে প্রত্যাশিত আচরণের নৈতিক মানদণ্ড তত বদলে যাবে। বদলাতে বদলাতে একটা পর্যায় এমন হবে সমাজের মূল চরিত্রে টান পড়বে। পরিশেষে নৈতিক আপেক্ষিকতার দোহাই দিয়ে বহুত্ববাদি এটিকেট চালু করার দাবি আসবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার নৈতিক কৌশল বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে কাজের ঔচিত্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দেবে এবং নৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
সমাজের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। সমাজ যখন কোন কাজটি ঠিক হচ্ছে আর কোন কাজটি ঠিক হচ্ছে না, সেটা বিচার করার সক্ষমতা অর্জন করে, তখন তাকে আমরা নৈতিক উন্নয়ন বলি। এই নৈতিক উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সমাজ রাতারাতি নৈতিকভাবে উন্নত হয় না। সমাজে বসবাসকারি মানুষের সাধারণ অভিজ্ঞতা ও নৈতিকতা চর্চার ভেতর দিয়ে সমাজের নৈতিক সক্ষমতা গড়ে ওঠে। তো এতোদিন সমাজের নৈতিক উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা মনে করা হতো নৈতিক আপেক্ষিকতাকে। সেই প্রোটাগোরাসের আমল থেকে দার্শনিকরা নৈতিক আপেক্ষিকতা স্বীকার করে আসছেন। বিংশ শতাব্দিতে এসে ফ্রানয বোয়াস এবং ক্লিফোর্ড গীয়ার্জদের মতো নৃবিজ্ঞানিরা ভিন্ন ভিন্ন কৌমসমাজের সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতার সাথে নৈতিক আপেক্ষিকতার বৈধতা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে মানুষের একটি প্রধান অধিকার হিসেবে দাবি করেছেন। কিন্তু সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে। নৈতিক স্থবিরতাকে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের একটি বিকৃত পরিণতি হিসেবেও দেখা যেতে পারে। ব্যক্তি, সমাজ, সংস্কৃতি, প্রথা ও প্রতিষ্ঠানভেদে মূল্যবোধের ভিন্নতা রয়েছে বলে যে যার মতো করে নৈতিক মানদণ্ড নির্ধারণ করে তা দ্বারা ভালমন্দ, ঠিক বেঠিক, ঔচিত্য- অনুচিত্য বিচার করছে। এ কারণে সমাজের নৈতিক প্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একজনের কাছে মদ খাওয়া ভাল আরেক জনের কাছে মদ খাওয়া খারাপ। একজনের কাছে সুদ খাওয়া ঠিক, আরেক জনের কাছে সুদ খাওয়া বেঠিক। একজনের কাছে মুক্তবাজার কাম্যতো আরেক জনের কাছে নিয়ন্ত্রিত বাজার কাম্য। একজনের কাছে কোটাপ্রথা ন্যায্য, আরেক জনের কাছে কোটাপ্রথা অন্যায্য। সমকামিতাকে কেউ অপরাধ মনে করে, আবার কেউ অধিকার মনে করে। এভাবে নৈতিক আপেক্ষিকতা অনেকটা নৈতিক নৈরাজ্য তৈরি করছে।
ইদানিং নৈতিক আপেক্ষিকতাবাদের চেয়েও বড় বাধা মনে করা হচ্ছে সেনসেশানকে। হঠাৎ কোন একটা বিষয় নিয়ে সমাজে যখন অতিমাত্রায় সেনসেশান তৈরি হয় তখন মানুষের মধ্যে নৈতিক বিচারবোধ কাজ করে না। সে কারণে সেনসেশান তৈরি করাকে মোরাল ক্রাইম বা নৈতিক অপরাধ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। কথা হচ্ছে সমাজে নৈতিকবোধ বিলোপকারি সেনসেশান কীভাবে তৈরি হয়, আর কী নিয়ে তৈরি হয় তা না জানলে মানুষ কীভাবে জানবে যে সে একটি অপরাধ করেছে? সমাজে নানা ইস্যু নিয়ে সেনসেশান তৈরি হতে পারে। মাদক, প্রেম, টিভি সিরিয়াল, ক্রিকেট, চাঞ্চল্যকর অপরাধ, আন্তর্জাতিক সংঘাত, পুঁজিবাজার, নতুন ফ্যাশনের পোষাক, নতুন প্রযুক্তি, নতুন খাবারসহ আরো নানাকিছু নিয়ে সেনসেশন হতে পারে বা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, যারা ক্রিকেট নিয়ে অতি মাত্রায় আগ্রহী তারা ক্রিকেটের প্রতি অতিআসক্তিকে স্বদেশপ্রেম হিসেবে জাহির করে, কর্পোরেট কোম্পানির বিজ্ঞাপনের জিংগেলকে দেশাত্মবোধক গান মনে করে গায় এবং জাতীয়তাবোধ তৈরির ইতিহাস, ঐতিহ্য, চিহ্ন, ভাষা, শব্দ, মোটিফগুলোর বাণিজ্যিক ব্যবহারে সহায়তা করে। এভাবে গরীবলোকের ইস্যুগুলোকে পাবলিক স্ফেয়ার থেকে দূরীভূত করতে ভূমিকা রাখে, সর্বোপরি অসহায় মানুষের দুর্যোগের প্রতি অনুভূতিশীলতাকে জোর পূর্বক ভোতা করে রাখার জন্য ক্রিকেটকে ড্রাগ হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে সমাজের এবং সমাজে বসবাসকারি ব্যক্তিবর্গের নৈতিকবোধকে অকার্যকর রাখতে ভূমিকা রাখে।
Comments