Skip to main content

দর্শন পড়ে ক্যারিয়ার গড়া

সরওয়ার কামাল

দর্শনের ছাত্ররা ব্যাংকে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়ার প্রাক্কালে প্রায়ই দর্শনের সাথে ব্যাংকিং-এর সম্পর্ক বিষয়ে জানতে চায়। ব্যাংকে একজন দর্শনপড়া গ্র্যাজুয়েটকে কেন নিয়োগ দেওয়া হবে, তা নাকি প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হয়। এটি এমন একটি প্রথাগত প্রশ্ন, যা কর্মক্ষেত্র নির্বিশেষে যে কোন নিয়োগ পরীক্ষায় জিজ্ঞেস করা হয়। যারা চাকরিদাতা তারা আসলেই দেখতে চায়, চাকরি প্রার্থী নিজের যোগ্যতা ও উপযুক্ততা নিয়ে কতটা গোছালো চিন্তা করতে পারেন।এছাড়া তারা সত্যি সত্যি জানতে চান, এই প্রার্থী তাদের প্রত্যাশিত কাজের জন্য উপযুক্ত কিনা। দর্শন পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু কারণেও এই ধরনের প্রশ্ন করা হতে পারে, যার মধ্যে দর্শনের দুর্বল ব্রান্ডিং, বিষয়টি সম্পর্কে চাকরিদাতাদের ধারণা না থাকা কিংবা ভুল ধারণাজাত সন্দেহ অন্যতম।

বাংলাদেশি সমাজে দর্শন সম্পর্কে দুইটি স্থির বিশ্বাস দীর্ঘদিনব্যাপী প্রবলভাবে বিদ্যমান। এখানে দর্শন পড়া এবং নাস্তিকতার চর্চাকে এক করে দেখা হয়। আবার এমনও মনে করা হয় যে, দর্শন বিষয়টি আটপৌরে জীবনের প্রয়োজন মেটায় না বলে গুরুত্বহীন। যারা দর্শন পড়েছে তাদেরও অনেকে দর্শন নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন না। ইহকালের জন্য টাকা উপার্জন এবং পরকালের জন্য পূণ্য উপার্জন করা ব্যতীত তারা আদতেই অন্য কিছুর গুরুত্ব স্বীকার করেন না। এই ধরনের টাকা ও পুণ্যের বাইনারিতে দেখা জীবনবীক্ষা থেকেই টাকা উপার্জনেচ্ছু গড়পড়তা ছাত্র এবং পূণ্যার্জনেচ্ছু ছাত্রীরা দর্শন পড়া থেকে বিরত থাকাকে নিরাপদ মনে করে।

জ্ঞানের জন্য যাদের য়ুরোপীয় চেরাগের আলো দরকার হয়, সেরকম কিছু আলোকিত মানুষও দর্শন সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। কোন একদিন টকশোতে একজন প্রফেসরের সাথে আরেকজন ব্যবসায়ী নেতা বাজেট নিয়ে আলোচনা দেখছিলাম। অর্থনীতির প্রফেসর যখন অর্থনৈতিক মডেল, দর্শন এবং তাত্ত্বিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে বাজেট বিশ্লেষণ করছিলেন, তখন ব্যবসায়ী নেতা বলে ওঠলেন, 'আমি এইরকম আইভরি টাওয়ার থেকে দেখি না, তাত্ত্বিক জগতেও বাস করি না। আমি সরাসরি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখি'। তখন প্রফেসর বললেন, 'তত্ত্ব কীভাবে তৈরি হয় শুনি?' এই প্রশ্ন শুনে উনি লা-জবাব বনে গেলেন বটে, কিন্তু তর্কে হারতে চাইলেন না। তখন ব্যবসায়ী নেতা বললেন, তত্ত্বীয় ব্যাপারটাই অবাস্তব ও অপ্রয়োজনীয়। কারণ তত্ত্ব ও বাস্তবের ফারাক বিস্তর। তার কথার শেষাংশের কিছু অংশ সত্য, কিন্তু অর্থনৈতিক তত্ত্ব যে একটি বিশেষ ফিল্ডের বাস্তব উপাত্ত এবং চলমান ঘটনাসমূহের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সিমুলেশনের ভিত্তিতেও প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটি তিনি না জেনেই তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতাকে অস্বীকার করছেন। অনুরূপভাবে ফিলোসফি না বোঝেই 'ডক্টরেট অব ফিলোসফি' ডিগ্রী প্রাপ্ত লোকজনের দর্শনবিদ্যাবিদ্বেষ কখনো কখনো পীড়াদায়ক পর্যায়ে পৌঁছে।

দর্শনকে কম গুরুত্বপূর্ণ ও অপ্রায়োগিক শাস্ত্র হিসেবে দেখা হলেও দর্শন পড়া বেশ কিছু সফল ব্যক্তি আছেন, যারা ব্যবসায় প্রশাসনে চমৎকার সাফল্য দেখিয়েছেন। কারণ, দর্শনের পাঠ ও চর্চা এমন কিছু সক্ষমতা যোগায় যা নেতৃত্বের পরিপক্কতা ও মানবীয় সম্পন্নতা অর্জনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। বিশেষ করে ক্রিটিক্যালি চিন্তা করা, মানুষকে নিজস্ব ধারণা দেওয়া, ভিন্নমতাবলম্বীদের সাথে মিতষ্ক্রিয়া করা, জটিল সমস্যার বিশ্লেষণ করা, দূরবর্তী কারণ ও পরিণতি সম্পর্কে সজাগ থাকা, ব্যাপক পরিসরে ঘটনার আদ্যোপান্ত দেখা, সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রক্রিয়ায় আবেগবিযুক্ত থাকা এবং একটি যুক্তির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যুক্তিচিত্র দেখা ইত্যাদি সক্ষমতা যোগায় বলে দর্শন পাঠের গুরুত্ব স্বীকার করেন ভিশনারি লিডাররা।

দর্শন মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি ক্রিটিক্যাল পারস্পেক্টিভ দেয় এবং গড়পড়তা মানুষ আরামবোধ করেনা এমন অনেক কিছুকে হজম করার মতো আবেগিক ও বৌদ্ধিক সক্ষমতা যোগায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো দর্শন একটি ভিন্ন প্রেক্ষিত দেয়, যা যে কোন বিষয়কে দেখার দৃষ্টিদোষ এড়ানোতে সাহায্য করে। কাজেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও উন্নয়নের সমস্যাকে যারা বিশুদ্ধ যুক্তির নিরিখে বিশ্লেষণ করে সৃজনশীল সমাধানের আশা রাখেন, তারা দর্শনের গ্র্যাজুয়েটদের স্বাগত জানান। নতুন অর্থনীতিতে শুধু কম্পিউটার জানারাই ভূমিকা রাখবে এমন চিন্তা খুবই অগভীর। বরং দর্শনে যে ধরনের যৌক্তিক চিন্তার কৌশল শেখানো হয় তা উপাত্ত বিশ্লেষণ ও কম্পিউটার লজিকের ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী। এই জন্য অনেকে কম্পিউটারে স্নাতক পাস করার পরে দর্শনে স্নাতকোত্তর পড়তে আসে।

বিশ্বে বেশকিছু কোম্পানীর সফল সিইও দর্শনের ছাত্র ছিলেন। এইচপি'র সাবেক নির্বাহী কার্লি ফাইওরিনা, আইকান এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা কার্ল আইকান, এফডিআইসি'র চেয়ারম্যান শেইলা বেয়ার, হেজ ফান্ডের ব্যবস্থাপক জর্জ সরোস, টাইম ওয়ার্নার এর সিইও জেরাল্ড লেভিন, ফ্লিকার'র কো-ফাউন্ডার স্টুয়ার্ট বাটারফিল্ড, পেইপাল-এর কো-ফাউন্ডার পীটার থিয়েলসহ অনেকে তাদের দর্শনপাঠজাত সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তারা এমন জায়গায় কাজ করেছেন, যেখানে হার্ভার্ডের এমবিএ ডিগ্রি ব্যতীত অন্য ডিগ্রির কথা ভাবা যায় না। তারা এমবিএ'র মিথকে ভেঙে সেখানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন।

ব্যাংকের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ঝুঁকি বিশ্লেষণ, নীতি বিশ্লেষণ, সামাজিক দায়বদ্ধতা অনুধাবন, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক সংকটের বোঝাপড়া, ব্যাংকের নিজস্ব মেরিটপুল গঠন, ডিসিশন মেকিং-এ যৌক্তিক উৎকর্ষতা আনা, সামাজিক সম্পর্কের উন্নয়ন, উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং ভিন্ন কোন প্রব্লেম সলভিং এপ্রোচের জন্য দর্শনের গ্র্যাজুয়েটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর সাথে ক্রিটিক্যাল চিন্তা, গেম থিওরির দখল এবং স্পষ্টতর যোগাযোগ দক্ষতাতো আছেই। কাজেই একটি ব্যাংক পরিচালনা এবং ব্যাংকের সাথে অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সম্পর্ক বজায় রাখার নানা স্তরে দর্শনের প্রয়োগ রয়েছে। একটি বিনিয়োগ কিংবা ঋণের অর্থনৈতিক দিক ছাড়াও নানা নৈতিক ও সামাজিক দায়ের বোঝাপড়ার ব্যাপার আছে, যা দার্শনিক এপ্রোচ ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়। আমরা যাই বলিনা কেন, ইকোনোমিক ফেনোমেনার একটা অধিবিদ্যক বোঝাপড়ার যে প্রয়োজন আছে সেটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পেছনের ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করলে বোঝা যায়।

এসবের বাইরে দর্শন পড়ুয়ারা লেখালেখির পেশায় ভাল করেছেন; অনেকে আইন পেশাতেও দক্ষতা দেখিয়েছেন। আমরা যখন ছাত্র সেই সময় বেশ কয়েকজন বিখ্যাত দর্শন গ্র্যাজুয়েটের কলাম পড়তাম, যারা দর্শনের গ্র্যাজুয়েট ছিলেন। লেখক হিসেবে নোম চমস্কি, পিটার সিংগার, দিলীপ পাদগাওঙ্কার, তারিক আলী, গুরচরণ দাস, প্রতাপ বানু মেহতা অন্য দশ পাঁচজন হতে আলাদা ছিল। যে কেউ অন্য কারও হতে আলাদা হতে পারে কিন্তু গুণগত উৎকর্ষতার ভিত্তিতে স্বাতন্ত্র্য নিয়ে দ্যুতিমান হওয়া একেবারেই ভিন্ন ব্যাপার। তারা মেধায় ছিলেন উজ্জ্বল, লেখায় ছিলেন ক্ষুরধার, বিশ্লেষণে ছিলেন, যাকে বলে, সফিস্টিকেটেড। প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দর্শনের গ্র্যাজুয়েটরা ভাল করেছেন; যেমন বসনিয়ার আলীয়া আলিইজেতবেগোভিচ, ইরানের সাইয়েদ মোহাম্মদ খাতামি কিংবা চেক রিপাবলিকের ভাচলাভ হাভেল। তারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্য অনেকের তুলনায় মনন ও ব্যক্তিত্বের উৎকর্ষতায় পূর্ণ ছিলেন। ভাচলাভ হাভেলের 'পাওয়ার অব দ্য পাওয়ারলেস' প্রবন্ধটি ক্ষমতার অসাধারণ ব্যাখ্যাপুর্ণ একটি পলিটিকাল ক্লাসিক। বর্তমানেও একজনের নাম বলা যেতে পারে, তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ। ম্যাক্রঁ প্রেসিডেন্ট হিসেবেই আলোচনায় এসেছেন তা নয়, তিনি যুবক বয়সেই দর্শনের একজন গুরুত্বপূর্ণ বোদ্ধা হিসেবে পৃথিবীর বিখ্যাতসব দার্শনিকের সঙ্গী ছিলেন। ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী ইকোল ও কাফে সার্কেল দর্শনের সূতিকাগার হিসেবে এমনিতেই প্রসিদ্ধ। ফরাসি দর্শনের সাথে জার্মান দর্শনের মিতস্ক্রিয়া ঘটলে একেবারে সোনায় সোহাগা। ম্যাক্রঁ এই কাজটি ভালভাবেই পারেন। একদিকে সমন্বয়বাদি ফরাসি দার্শনিক পল রিকোয়ারের ছাত্র, অন্যদিকে জার্মান দার্শনিক য়ুর্গেন হ্যাবারমাসের দার্শনিক চিন্তার নিত্য সহচর হিসেবে ম্যাক্রঁ পড়েছেন, বুঝেছেন এবং প্রশ্ন করেছেন এমন সব দার্শনিককে যাদের বই পড়ার জন্য একহাতে মূলবই এবং অন্যহাতে ডিকশনারি নিয়ে বসতে হয়।

ওয়াল্টার বেঞ্জামিন একসময় প্যারিসকে য়ুরোপের রাজধানী বলেছিলেন, বর্তমান য়ুরোপীয় ইউনিয়নে সেটা কাগজেকলমে ব্রাসেলস। তবুও ম্যাক্রঁ পুরো য়ুরোপ নিয়েই স্বপ্ন দেখেন। তার গুরু পল রিকোয়ারের প্রভাবে সমন্বয়বাদিতাকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে নিয়ে এলিসি প্রাসাদের আভিজাত্যকে সামলে জনগণের কাছে থাকার কাজটিও সযত্নে করে যাচ্ছেন।

তবে, যে যাই বলুক না কেন, দর্শনের মূল ক্যারিয়ার ফিল্ড হলো দর্শন ও জনসম্পৃক্ত বিষয়াদির দেখভাল করা। অর্থাৎ, দর্শন পাঠের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দার্শনিক হওয়া। কিন্তু আমাদের দেশে দর্শনেরই ক্লাসে আপ্তবাক্য আওড়ানো হয়, ‘রিড ফিলোসফি বাট ডুন্ট ট্রাই টু বি আ ফিলোসফার’। অথচ জীবন-জগতের দার্শনিক ব্যাখ্যা বাদ দিলেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক ইস্যুগুলোর গভীরতর উপলব্ধির জন্য দার্শনিক পদ্ধতি অনুসরণ এবং দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকল্প নেই। অন্যান্য বিষয় পড়ে যারা বিভিন্ন পেশায় কাজ করে, তাদের দুর্বলতার জায়গাগুলোর দিকে আলোকপাত করলে বুঝা যায়, সমাজে দার্শনিক দারিদ্র্য কী পর্যায়ে আছে। যে কোন নাগরিক মূল্যবোধের জায়গায় নন্দনতাত্ত্বিক দুর্ভিক্ষ এবং ব্যক্তিত্বের হীনম্মন্যতার অন্যতম কারণ হলো দর্শন সম্পর্কে অজ্ঞতা। দর্শনের গুরুত্ব বুঝার জন্যও দর্শনপাঠ জরুরি। দর্শন পড়ে সত্যিকারের দার্শনিক ভূমিকা রাখতে পারলে যে কোন পেশাতেই ভালো ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। এভাবে জাতীয় মূল্যবোধ ও জাতীয় চরিত্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব। কাজেই দর্শন সম্পর্কে কুসংস্কার এবং ভুল ধারণা বাতিলের জন্য যত যুক্তি ও উদাহরণ দরকার তার অভাব নেই, শুধু অভাব আমাদের মুক্তমনের।

২৯ জুলাই, ২০১৮

নেত্রকোনা

 

 

Comments

Popular posts from this blog

মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার

সরওয়ার কামাল শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় ভালো, যা সম্পর্কে প্রশংসা করে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রবন্ধ লিখেছেন “ ল্যানসেট ” নামক মেডিক্যাল জার্নালে। কিন্তু এতে আমাদের বগল বাজিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়া এবং বিজ্ঞান শিক্ষা সংকুচিত হয়ে পড়া আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণে আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্যগুলো হাসিল হচ্ছে না, যার একটি হলো সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, অপরটি হলো শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা। অর্থাৎ সব শিশুই যাতে সরকারের সুযোগ ব্যবহার করে উন্নত জীবনের সন্ধান করতে পারে, তার শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, তার মধ্যে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রধান কারণ দারিদ্র্য ও অপুষ্টি বা স্বাস্থ্যহীনতা । মাধ্যমিক পর্যায়েও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে দারিদ্র্য সমস্যার ...

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনা জালে

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনা জালে ............................................................................... সাম্প্রতিক কালে আমাদের নৈতিক উপলব্ধিতে, সামাজিক উদ্বেগে কিংবা মূল্যবোধে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। প্রযুক্তির নিবিড় ব্যবহার, বিশ্বায়নের প্রভাব, বিশ্বরাজনীতির অভিঘাত, বাজার সংস্কৃতির ধাক্কা ও চরমপন্থী ভাবাদর্শের টানাপড়েনে আমাদের চিরকালীন মূল্যবোধ ভেঙ্গে পড়েছে। নৈতিকতার সীমানা সরে যাচ্ছে প্রথাগত বিশ্বাস ও প্রতিষ্ঠানসংলগ্নতা থেকে। গতিময় জীবনের অভিঘাতে চরম অস্থিরতা ব্যক্তি থেকে ব্যষ্টির ব্যাপ্তিতে বিরাজ করছে। সর্বত্র আহাজারি, শোনার অবসর নিয়ে হাজির নেই কেউ। মানুষ যে নির্বিকার তাও নয়, তারা বিকারগ্রস্থ, পূর্ণমাত্রায় ঘোরগ্রস্থ, কেবল অপ্রত্যাশিত ঘটনাপ্রবাহের সাথে তাল মেলানোতে। তারা এখন এমন সব বিষয়ে আলোড়িত হয়, যে বিষয়ের সাথে তাদের সরাসরি যোগ নেই। থাকলেও তা অনেক ক্ষীণ ও দূরবর্তী কার্যকারণ সম্পর্কে আবদ্ধ। একইভাবে, তারা এমন সব পরিণতি ভোগ করে, যার জন্য তারা নিজেরা দায়ী নয়। আর যারা দায়ী তারা এর পরিণতি ভোগ করেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ বয়সের দিকে এই প্যার...

মহেশখালীর সমাজ ও সংস্কৃতি

সরওয়ার কামাল সাগর কূলে গিরিকুন্তলা মোহিনী মহেশখালী দ্বীপের ৩৮৮ বর্গকিলোমিটার ভূত্বকে প্রায় পাঁচ লক্ষ লোকের বসতি। তাদের বসতি ঘিরে গড়ে উঠেছে উপকূলীয়-দ্বীপাঞ্চলীয় সমাজ। এই সমাজসভ্যদের মানসিক ঐক্য ও জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হয়েছে শনাক্তযোগ্য বিশেষ স্থানীয় সংস্কৃতি। মানবজাতির চিরকালীন অভিযাত্রার অংশ হিসেবে দেশের নানা জায়গা থেকে হিজরত করে লোকজন এসে বসতি গেড়েছে মহেশখালীতে। তাই তাদের ভাষা ও আচরণে শনাক্ত করা যায় এমন বৈচিত্র্য ও তারতম্য, যা দিয়ে কক্সবাজারের অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের তুলনায় মহেশখালীবাসীকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করা যায়। যে পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ঠ্যাবলী নিয়ে মহেশখালীর সমাজ ও মানুষের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য তৈরি হয়েছে, চাটগাঁইয়া ভাষার উপভাষাতুল্য মহেশখালীর দ্বীপাঞ্চলীয় বুলি তার মধ্যে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। [1] তবে সমস্যা হলো, লিখিত সাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অভাবে স্থানীয় ইতিহাসের মতোই কালিক সূচকের নিরিখে এর জনসংস্কৃতি বর্ণনা করা দুরূহ। একেতো সংস্কৃতি স্বয়ং একটি ব্যাপক ধারণা, তদুপরি, এটি সতত পরিবর্তনশীল। ভাষা ও সংস্কৃতি স্রোতস্বী নদীর মতো বহমান। মানুষের কথা, স্মৃতি, পুরা...