Skip to main content

হামিদ দাভাষির পাশ্চাত্য মোকাবেলা

সরওয়ার কামাল

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান অধ্যয়ন ও তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক হামিদ দাভাষি প্রাচ্যবাদোত্তরবাদি ভাবুক, যিনি এডওয়ার্ড সাঈদের পূর্ব থেকেই জ্ঞানের রাজনীতি এবং সমাজবিদ্যা নিয়ে ভাবছেন, গবেষণা করছেন এবং লিখছেন কিন্তু ওরিয়েন্টালিজম’ নামক গ্রন্থটির অভাবনীয় জনপ্রিয়তা এডওয়ার্ড সাঈদকে তারকা বুদ্ধিজীবীর খ্যাতি এনে দিলে প্রাচ্যবাদ নিয়ে সাঈদের পূর্ব থেকে সোচ্চার থাকা দাভাষি সাঈদীয় পাদপ্রদীপের নিচে চলে যান, যদিও তাদের মধ্যে জ্ঞানগত ভাব বিনিময় বরাবরই অক্ষুণ্ণ ছিল। সাঈদ ও হামিদ দাভাষি উভয়েই অভিন্ন জায়গা থেকে পশ্চিমা জ্ঞান এবং জ্ঞান উৎপাদনের কারখানাকে মোকাবেলা করেছেন তবে, একক পরাশক্তি হিসেবে মার্কিন সাম্রাজ্য ধসে পড়ার পর আঞ্চলিক শক্তিসমূহের উত্থানের মাধ্যমে যেভাবে পাশ্চাত্য বনাম ইসলাম নামীয় বাইনারি বিরোধের অবসান ঘটেছে, তাতে করে নতুন ধর্মতাত্ত্বিক পরিপ্রেক্ষিতে সাঈদের চেয়ে হামিদ দাভাষির চিন্তা অধিকতর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে হাজির হয়েছে। এছাড়া সাঈদোত্তরকালে পাশ্চাত্যের বিপরীতে ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কিত জ্ঞানকে উপযুক্ত ব্যাখ্যা ও সমালোচনার মাধ্যমে মুসলিমদের অবস্থান নিরূপণের প্রয়াস চালিয়ে দাভাষি নিজেকে সাঈদের যোগ্য উত্তরসূরিতে পরিণত করেছেন। টুইনটাওয়ারে হামলাপরবর্তী সময়ে ফ্রাঞ্জ ফানোঁ ও সাঈদ, উভয়ের বোঝাপড়াকে সমকালীন প্রেক্ষিতে নবায়ন করে তিনি এমন এক বোঝাপড়া হাজির করেছেন, যার তুলনায় সাঈদের চিন্তাকে নবিশি বলে মনে হতে পারে হামিদ দাভাষির লেখা বেশি নয়, আবার কমও নয়; এমনকি ভাষামাধুর্যের দিক দিয়ে সাঈদের কাছাকাছিও নয় কিন্তু তার প্রতিটি বই সাঈদের চিন্তাকে যেমন যুগোত্তর প্রাসঙ্গিকতা দিয়েছে, তেমনি প্রাচ্যবাদ হয়ে বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় ইসলাম নিয়ে মুসলিমরা কোন জায়গায় দাঁড়াতে পারে তার দিশা দিয়েছে। ফলে গ্রহণযোগ্যতা ও উপযুক্ততার নিরিখে দাভাষির চিন্তা পর্যালোচনা করা, প্রাচ্যবাদ ও সাঈদ সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া হালনাগাদ করারই অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে দাভাষির চিন্তা মুসলিমকে লক্ষ করে চলা জ্ঞানের সমকালীন রাজনীতি এবং সেইসাথে, বিশ্বরাজনীতিতে ইসলামের রূপ এবং মুসলিমের অবস্থান সম্পর্কে আমাদের বেহুঁশ দশারও অবসান ঘটাতে পারে।   

 

অনেকেরই অভিমত, দাবাষির চিন্তা প্রাচ্যবাদের উত্তরাধিকার। তবে তার চিন্তা যেখান থেকে শুরু হয়েছে, যেভাবে অগ্রসর হয়েছে এবং যেই পরিপ্রেক্ষিত হাজির করেছে, তা বিবেচনায় নিলে তাকে প্রাচ্যবাদোত্তর ভাবুক বলাই সমীচীন। তিনি নিজেও প্রাচ্যবাদোত্তরবাদের একজন ভাবুক হিসেবেই নিজেকে পরিচিত করেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি প্রাচ্যবাদিদের সমালোচনা করেন, প্রাচ্যবাদের সমালোচকদের ত্রুটিও খুঁটিয়ে বের করেন। কাজেই সাঈদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখে নিবিষ্ট পাঠজাত সাঈদীয় চিন্তাকেও তিনি সাহিত্যকেন্দ্রিক জ্ঞানভাষ্যের সীমিত পর্যালোচনা বলে সমালোচনা করেন এবং জ্ঞানের সমাজবিদ্যার দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রাচ্যবাদোত্তর চিন্তার সূত্রধার হিসেবেই দাভাষি তার গবেষণা ও লেখাজোঁখায় সমকালীন চিন্তার প্রতিনিধিত্বশীল চিন্তকদের খারিজ করেছেন। করেছেন অবশ্যই যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাদের মোকাবেলা করতে গিয়ে তিনি পাশ্চাত্য ও পশ্চিমা চিন্তাকেই মোকাবেলা করেছেন সাহিত্য পর্যালোচনা তার প্রধান জীবিকা হলেও অনেকগুলো বিষয় নিয়ে তিনি বই লিখেছেন, যেগুলোর জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা তাকে সাহিত্য ছাড়িয়ে জ্ঞানের সমাজতত্ত্ব, পারসি সংস্কৃতি, ধর্মতত্ত্ব, রাজনৈতিক ভাবাদর্শ, বৈশ্বিক রাজনীতি এবং স্থানীয় ইতিহাসসহ জ্ঞানউৎপাদন সম্পর্কিত রাজনীতির একজন দক্ষ ভাষ্যকারের পরিচিতি দিয়েছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনপ্রিয় বইয়ের রচয়িতা হিসেবে বিশেষ কোন বইয়ের জন্য তার উপর মতাদর্শিক খ্যাতির তকমা আরোপ করা যায় না সত্য, তবে ইসলামি মুক্তির ধর্মতত্ত্ব এবং ‘ব্রাউন স্কীন, হোয়াইট মাস্ক’কে তার চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্বশীল পুস্তক বলে ধরে নেওয়া যায়

 

এডওয়ার্ড সাঈদের পরে তিনি পোস্ট-ওরিয়েন্টালিজম নিয়ে লিখে যেমন সাঈদের ব্যাখ্যাকে যুগোত্তর প্রাসঙ্গিকতা দিয়েছেন, তেমনি ফ্রাঞ্জ ফানোঁ’র পরে ‘ব্রাউন স্কীন, হোয়াইট মাস্ক’ লিখে সংস্কৃতির জায়গায় বুদ্ধিবৃত্তিক বেনিয়া এবং স্বদেশি চরবুদ্ধিজীবী ও দালালদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেনবসনিয়ান দার্শনিক আলীয়া আলী’ইজেতভেগোভিচের ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মধ্যস্থিত ইসলাম’র পরে পাশ্চাত্য ও ইসলাম নিয়ে নতুন চিন্তার সূত্রপাত করে ইসলাম কীভাবে পাশ্চাত্যকে মোকাবেলা করে এসেছে এবং ভবিষ্যতে কীভাবে করতে পারে তার সম্ভাব্য রূপরেখা প্রস্তাব করেছেন। একইভাবে তিনি স্যামুয়েল হান্টিংটনের ‘সভ্যতার সংঘাত’ সম্পর্কিত ব্যাখ্যাকে বৈশ্বিক রাজনীতির অকেজো ব্যাখ্যা বলে চিহ্নিত করেছেন এবং সাম্রাজ্যবাদি আধিপত্যের বিপরীতে ইসলাম কীভাবে পশ্চিমা শক্তিকে মোকাবেলা করে এসেছে সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার মতে, সভ্যতাকেন্দ্রিক বিরোধের ধারণা এখন প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা কর্তৃক ইতিহাসের সমাপ্তির দাবিও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। খোদ আমেরিকাতেই উদারবাদি নীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে, যেখানে কর্তৃত্ববাদি সরকারের উত্থান এবং বর্ণবাদি সংস্কৃতি ও ইসলামাতংকের তীব্র বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এভাবে ঘৃণার পরিসরের সম্প্রসারণ ও ঘৃণ্যদের অপরায়নের মুখে মুসলিম হওয়ার চ্যালেঞ্জ বুঝা এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামকে শনাক্ত করা জরুরি। এই জরুরি কাজটি ধারাবাহিকভাবেই করে চলেছেন হামিদ দাভাষি।      

 

মুসলিম হওয়ার দায়

প্রাচ্যবাদিরা যেভাবে ইসলামকে সংজ্ঞায়িত করে, ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞানের প্রক্ষেপ নির্ধারণের মাধ্যমে যেভাবে পশ্চিমাদের জন্য জ্ঞান তৈরি ও সরবরাহ করে, জ্ঞানের সেই ধরনকে শনাক্ত করে মুসলিমরা তাদের কর্তৃত্বমূলক জ্ঞানকাণ্ডের প্রভাবের আওতা থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। উপনিবেশিত মনোপিঞ্জর থেকে মুক্তি পেতে শুরু করেছে। পশ্চিমের অস্তাচল স্পষ্ট হওয়ার প্রাক্কালে পশ্চিমা জ্ঞানের আধিপত্যও হ্রাস পেতে শুরু করেছে ফলে, প্রাচ্যতো বটেই, তারমধ্যে ইসলামও নিজেকে পশ্চিমা জ্ঞানভাষ্যের জঞ্জাল হতে মুক্ত করতে শুরু করেছে। পাশ্চাত্য ও ইসলাম বলে যে বাইনারিতে ওসামা বিন লাদেনের ইসালামি জঙ্গিবাদ ও আয়মান হিরসি আলির ইসলামাতঙ্ককে বিপ্রতীপভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা থেকে বুঝা যায়, বর্তমান বিশ্বে মুসলিমের উপস্থাপনা কেমন। টুইন টাওয়ার ধসে পড়ার সাথে সাথে যখন পাশ্চাত্য ও মুসলিম নামীয় বাইনারি ভাবাদর্শের টাওয়ার ভেঙ্গে পড়েছে, তখন হামিদ দাভাষিও পাশ্চাত্য ও মুসলিম, বাইনারির পরিবর্তে বিশ্বপরিমণ্ডলে মুসলিমের বর্তমান অবস্থান স্পষ্ট করার প্রয়াস পেয়েছেন। তার মতে, এখন ইসলামকে বুঝবার ও বর্ণনা করবার জন্য নতুন ভাষা দরকার, নতুন ভাষাভঙ্গি দরকার, যা শুধু আরবি, ফার্সি, জর্মন কিংবা ইংরেজিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং সার্বিক ভাষা হিসেবে যে কোন বিশেষ ভাষাকে ছাড়িয়ে তা ইসলামকে এমনভাবে ব্যক্ত করবে, যেন যে কোন ভাষার মানুষের কাছে তা স্বরূপে ধরা দিতে পারে।

 

কেন এমন নতুন ভাষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে? তার মতে, ইসলাম বনাম পাশ্চাত্য এবং ধর্ম বনাম ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ভাষা নিঃশেষিত হয়েছে। তার কার্যকরতা লোপ পেয়েছে। পাশ্চাত্য প্রভাব পরবর্তী ইসলামকে বুঝতে গেলে পশ্চিমারা ইসলাম সম্পর্কে যে জ্ঞানের সাম্রাজ্য তৈরি করেছে, ইসলাম নিয়ে যে কল্পরাজ্য নির্মাণ করেছে, তা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। তা করতে হবে নতুন জ্ঞানভাষ্য দিয়ে। এ কারণেই এখন ইসলামের জন্য নতুন ভাষাভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এতোদিন পাশ্চাত্য ও ইসলাম কিংবা পাশ্চাত্য ও মুসলিম বলে যে বাইনারি উপস্থাপিত হয়েছে, তা মুসলিম ও ইসলাম সম্পর্কে যত না ব্যক্ত করেছে, তার চেয়ে ঢের বেশি গুপ্ত করেছে, লুকিয়েছে। এই গুপ্ত জ্ঞানকে জনসমক্ষে, বিশ্বপরিমণ্ডলে জাহির করতে গেলে তাদের বাইনারি ছুড়ে ফেলতে হবে। এটা অবশ্যই ভাষার হাতুড়ি দিয়ে করতে হবে। যদি এই বাইনারি জ্ঞানের আধিপত্য ছুড়ে ফেলতে হয়, তবে উত্তর-ঔপনিবেশিক বাস্তবতায় কসমোপলিটন সমাজে মুসলিমরা যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে তার অনুভব ও সংবেদ ঝেড়ে ফেলতে হবে। কাজেই, নতুন বাস্তবতায় মুসলিমদেরকে তাদের শতশত বছর ধরে কাটিয়ে আসা কসমোপলিটনকে দেখতে হবে আত্মসমালোচনার দৃষ্টিতে। নিজেদের দিকে তাকাতে হবে সমালোচকের দৃষ্টিতে।

 

তার মতে, ঔপনিবেশিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে য়ুরোপের আধুনিক দীপায়নকে মিছেমিছি সার্বিকীকরণ করা হয়েছে। অথচ এই দীপায়ন য়ুরোপেরই আঞ্চলিক সংকীর্ণতা বৈ কিছু নয়। প্রাচ্যবাদিরা ইসলাম ও মুসলমানকে উপনিবেশিত হিসেবে তাদের আধিপত্যের ছায়াতলে দেখতে চেয়েছে। তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ এবং উপনিবেশিতদের নিকৃষ্ট হিসেবে উপস্থাপন করেছে। সাংস্কৃতিকভাবে একটা বিভাজন রেখা তৈরি করে, ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কিত জ্ঞানভাষ্য তৈরি করেছে, যাতে ইসলাম ও মুসলিমের যুগপৎ দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে। মুসলিম মানেই দুর্বৃত্ত, অপরাধী; এমন একটা বিশ্বাস ব্যবস্থা গড়ে তুলা হয়েছে। ফলত, মুসলমানকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা, তাদের ওপর নিপীড়ন চালানোকে আইনসিদ্ধ করা এবং সর্বোপরি ইসলাম সম্পর্কে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা সহজ হয়েছে।

 

য়ুরোপীয় আধুনিকতাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য প্রাচ্যে ইসলামি ভাবাদর্শ তৈরি করা হয়েছে, যার ভিত্তিতে ইসলামি পুনর্জাগরণের স্বপ্ন ও আন্দোলন দানা বেঁধেছে। তারা মুতাজিলাদের মতো য়ুরোপীয় যুক্তির নিরিখে ইসলামকে ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছে এবং বিজ্ঞানের ভিত্তিতে ধর্মীয় বিশ্বাসের গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণের প্রয়াস পেয়েছে। কিন্তু ইসলামের যে মূল বার্তা, যে সারৎসার, তার অর্থদ্যোতকতা মানবীয় যুক্তিনির্ভর নয়। অন্যদিকে বিজ্ঞান নিজেই জ্ঞান হিসেবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য সেই প্রশ্ন এসেছে। ফলে ইসলাম ও মুসলিম উভয়ই নতুন জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হয়েছে। এখন মুসলিম হওয়াটা একটা তত্ত্ববিষয়ক প্রশ্ন। ইসলাম কী এবং মুসলিম কে, এই প্রশ্ন তার স্বয়ংসত্তের নিরিখে বিচার করতে হচ্ছে। এটা করতে গেলে মুসলিমদেরকে ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে একটি মৌলিক পুনর্বিবেচনা করতে হবে; সেই সাথে দ্বীন, দৌলত ও দুনিয়া সম্পর্কেও নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে।

 

উপনিবেশকালে এবং তারপরে দীর্ঘদিনব্যাপী আধুনিকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গিয়ে মুসলিমরা ইসলাম নিয়ে অনেক কিছুতে আপস করেছে; সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রীতিনীতিতে আপসরফা করেছে। মুসলিমরা পশ্চিমা জ্ঞানের কতটুকু নিবে এবং কতটুকু বর্জন করবে তার হিসেবে কষেছে। গণতন্ত্রকে ইসলামে আত্মীকরণ কিংবা গণতন্ত্রের সাথে ইসলামের লাগসই সম্পর্ক স্থাপনের নিরীক্ষায় তারা ঢের সময় ব্যয় করেছে। শেষতক, গণতন্ত্রায়নের ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ইসলামের ব্যর্থতা হিসেবে। এদিকে, মুসলিমরাও জ্ঞানের ইসলামীকরণ ঘটানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু ইসলামের দৈত্যায়ন ও দুর্বৃত্তায়ন সম্পর্কিত জ্ঞানের উৎপাদনে যখন খোদ মুসলিমরাই জড়িত হয়ে পড়েছে, তখন এই ধরনের প্রান্তিক কাজ ফলপ্রসূ হয় নি। মুসলিমরা প্রথমে পশ্চিমাদের দ্বারা তৈরিকৃত জ্ঞান গ্রহণ করেছে; বিনাবিচারে মেনে নিয়েছে। পরে এই জ্ঞান আত্মস্থ করেছে। ফলে পরবর্তী প্রজন্ম যখন এই আত্মস্থিত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে চিন্তা করে তখন সেই চিন্তা আপাতদৃষ্টিতে মুসলিমের চিন্তা বলে গ্রাহ্যতা পেলেও আদতে তা পশ্চিমা চিন্তাই। কারণ এই চিন্তার কাঁচামাল ও পদ্ধতি পাশ্চাত্যের। পশ্চিমারাও মুসলিমদের চিন্তাকে গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না মুসলিমরা তাদের পক্ষ হয়ে, তারা যেভাবে চায় সেইভাবে চিন্তা করছে।  

 

মুসলিমরা পাশ্চাত্যের সমস্ত দার্শনিকদের পাঠ করে। আব্বাসীয় খেলাফতের কালে সমস্ত ধ্রুপদী দার্শনিকদের লেখা অনুদিত হয়েছিলো আরবিতে। ফলে ওই সময়ে মুসলিম দার্শনিকদের চিন্তায়ও পাশ্চাত্য যুক্তিবিদ্যার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। উপনিবেশের কালে ইসলাম যে আধুনিকতার সংস্পর্শে এসেছে, তা শুধু জ্ঞানগত পরিসরে নয়, প্রাতিষ্ঠানিক অনুকৃতির জায়গায়ও প্রভাব ফেলেছে। ফলে মুসলিমদের সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার, সর্বত্র আধুনিকীকরণের প্রয়াস দেখা দিয়েছে; যার ফলে আধুনিক রাষ্ট্রের যে প্রান্তিক পরিসরে ইসলামের ম্রিয়মাণ পিদিম জ্বলছিল, সেই পরিবারেরও যৌক্তিকীকরণ ঘটলো। সংসারের নববিন্যাস ঘটলো। ফলে মুসলিম হিসেবে টিকে থাকার সর্বশেষ পরিসর, পরিবারও বেদখলে চলে গেলো; ভাবাদর্শিক উপনিবেশের অধীনে পদানত হলো।

 

 

জ্ঞানের সমাজবিদ্যা

 

-য়ুরোপীয়রা চিন্তা করতে পারে কি না, এমন একটি প্রবন্ধকে সম্প্রসারিত করে হামিদ দাভাষি বইয়ের আকার দেন এবং কিছুদিন পরে একই শিরোনামে পাঠমুক্তি দেন এতে তিনি জ্ঞান ও ক্ষমতা নিয়ে তার মত ব্যক্ত করেছেন জ্ঞান ও ক্ষমতা নিয়ে যে তিনি মিশেল ফুঁকো কিংবা এডওয়ার্ড সাঈদের পুর্ব থেকেই সোচ্চার ছিলেন এবং ছাত্র অবস্থা থেকেই জ্ঞানের সমাজবিদ্যা সম্পর্কে সজাগতা লাভ করেন এতে তিনি পশ্চিমারা কীভাবে প্রাচ্যের চিন্তকদের অগ্রাহ্য করে, প্রাচ্যের প্রতি উন্নাসিকতা দেখায়, তা বর্ণনা করেছেন। পশ্চিমা চিন্তকরা তাদের চিন্তাকেই একমাত্র চিন্তা বলে স্বীকার করে। এমন কি মুসলিম সম্পর্কিত চিন্তাও তারা মুসলিমদের পক্ষ হয়ে করে নেয়।  

 

দাভাষি স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি পশ্চিমা জ্ঞানের আধিপত্য নিয়ে বিচলিত নন, কিন্তু পশ্চিমা জ্ঞানের বিশেষ বিশেষ ধরণ নিয়ে যারপর নাই উদ্বিগ্ন। কাজেই তিনি এইক্ষেত্রে দৃশ্যমানভাবে সরব ও সমালোচনামুখর তিনি পাশ্চাত্য জ্ঞানের জ্ঞানতাত্ত্বিক সম্ভাবনা ও জ্ঞানগত নির্ভরযোগ্যতায় সীমাবদ্ধতা দেখতে পান এবং জ্ঞানতত্ত্বের এই সীমাবদ্ধতাকে চিহ্নিত করতে চান প্রতিশোধের কৌশল হিসেবে নয় বরং জ্ঞানগত প্রতিরোধের জায়গা তৈরির কৌশল হিসেবে পাশ্চাত্য যে আমাদের সমূহ মানবীয় সত্যের মানদণ্ড হয়ে বসলো এবং যাবতীয় জ্ঞানের বেড় যে পশ্চিমা ফিতা দিয়ে মাপতে হচ্ছে, তা নিয়ে তিনি সজাগ আমাদের যে কোন বিষয়ের চিন্তা আসলেই চিন্তা হয়েছে কিনা তা কোন না কোন পশ্চিমা জ্ঞানের উৎসের সাথে যুক্ত করে মিলিয়ে নিতে হচ্ছে এটা শুধু প্রাচ্যবাদের জন্যই ঘটেছে কিংবা উপনিবেশের কারণেই ঘটেছে, তা নয়। এখনও প্রাচ্যের মুসলিমরা তাদের হয়ে জ্ঞানের নামে প্রাচ্যের, এবং বিশেষ অর্থে ইসলামের, বদনামি করে চলেছে।

 

কিন্তু এখন বিশ্বব্যাপী বাস্তবতার যে বহুমাত্রিকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা আমাদের নিজস্ব ইডিওম্যাটিক্স শেখাচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এখন জ্ঞান পরিমাপের নতুন মানদণ্ড উঁকি দিচ্ছে ফলে আমাদের সমকালীন বাস্তবতায় যেমন চিন্তা করতে হবে, তেমনি এই চিন্তা সম্পর্কীয় চিন্তা নিয়ে অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে, যেন পশ্চিমা জ্ঞানতত্ত্বে যে বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার কারণে ভ্রান্তির উদ্ভব ঘটেছে তা আমরা অতিক্রম করতে পারি তিনি উল্লেখ করেন, চিন্তার মাধ্যমে পাশ্চাত্য এগিয়ে গেছে সন্দেহ নাই, কিন্তু বাকী বিশ্ব যে পিছিয়ে গেছে, ব্যাপারটি তা নয় বরং প্রত্যেক দেশ-কালে এমন অনেক কিছু ভিন্নভাবে অনুভূত হচ্ছে, ভিন্ন জ্ঞানভাষ্যে প্রকাশিত হচ্ছে, যা পাশ্চাত্যে বসে হয়তো শোনা যাচ্ছে না

 

পশ্চিমারা তাদের বিশেষ জ্ঞানকে সার্বিকভাবে দেখে তাদের কাছে যা সত্য, পুরো জগতবাসীর জন্য তা’ই সত্য এমন একটি হামবড়া ভাব নিয়ে মত প্রকাশ করে কিন্তু প্রাচ্যের ইকবাল কিংবা মাহমুদ দারবিশদের মতো চিন্তকদের লেখা পড়লে হয়তো তারা ভিন্ন কিছু দেখতে পেতো। তারা এখন কিছু চরবুদ্ধিজীবী তৈরি করেছে, যারা তাদের হয়ে, তাদের জন্য মুসলিমদের সম্পর্কে জ্ঞান পয়দা করে। এটা করে তাদের বৃত্তি, খেতাব, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং তাদের মিডিয়া ব্যবহার করে। কিন্তু এইসব চর যেহেতু প্রাচ্যেরই লোক এবং প্রাচ্যের অভিজ্ঞতাই বর্ণনা করে, তা দেখিয়ে তারা বিশ্ববাসীকে বুঝাতে পারে যে, এই দেখো, এটা ওদেরই বক্তব্য, আমরা বলছি না। মানে হলো, ভাড়াটে গবেষক দিয়ে তারা এমন জ্ঞান উৎপাদন করছে, আমাদের সম্পর্কে এমন জ্ঞানভাষ্য তৈরি করছে, যা আমাদের অন্তর্গত বিষয়কে প্রতিফলিত করে, কিন্তু পশ্চিমা গেজ থেকেই প্রাচ্যের চরবুদ্ধিজীবীরা এই সমাজকে দেখছে বলে তা তাদের উদ্দেশ্যই চরিতার্থ করে। কাজেই পাশ্চাত্যের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য চরবুদ্ধিজীবী, যাদের অধিকাংশই মুসলিম, তারা পশ্চিমা দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে, পাশ্চাত্য গবেষণাপদ্ধতি ব্যবহার করে, তাদের ভাষাভঙ্গিতে ইসলামকে হেয় করে লিখছে, যাদের মধ্যে আজফার নাফিসি, ফুয়াদ আজমি, আয়ান হিরসি আলি, সালমান রাশদি, ইবনে ওয়ারাক, ইরশা মানজি-সহ অনেকেই আছে যারা ইসলামের ভিন্নমতাবলম্বী হিসেবে তাদের কাছে কদর পাচ্ছে। ফলে, ইরাকে, আফগানে, সিরিয়ায় এবং লিবিয়ায় যখন তারা বোমা মারে, তা মুসলিমদের ভালোর জন্যই করছে এমন একটা বৈশ্বিক প্রেষণা তৈরি করতে পারছে। ভাবখানা এমন, যেন ইরানিরা শান্তিতে নবোকভের ‘ললিটা’ পড়তে পারছে না বলেই ইরানিদের উদ্ধার করতে আমেরিকার মেরিন সেনা মোতায়নের প্রয়োজন পড়েছে।    

 

উপনিবেশিক চিন্তা কাঠামোতো বটেই, উত্তর-ঔপনিবেশিক চিন্তা থেকেও তিনি মুসলিমদের সরে আসতে বলেনকারণ ক্ষমতা ও আধিপত্যের সম্পর্ক এখন ঔপনিবেশিক বাস্তবতার যে উত্তরাধিকার বহন করছে, তাকে ছাড়িয়ে আরো বহু আধারে বিস্তৃতি লাভ করেছে এদিকে, অয়ুরোপীয়রা য়ূরোপীয় ভাষায় জ্ঞান চর্চা করছে, এটা হলো একই সাথে ক্ষমতা, জ্ঞান ও উপনিবেশের আধিপত্য তা সত্ত্বেও দাভাষি এটা সমস্যাজনক মনে করেন না নিজের ভাষাতে লিখলেই মুক্তি মিলবে বলে মনে করেন না নিজের মাতৃভাষাও উপনিবেশিক হতে পারে ভাষা যেভাবে মানুষ ও মানুষের চিন্তাকাঠামোকে দখল করে, তা যদি মাতৃভাষায় বহাল থাকে, তাহলে মাতৃভাষাতেও মানুষ উপনিবেশিত থেকে যেতে পারে বিপরীতভাবে য়ুরোপীয় ভাষাতেও মুক্তির বৈপ্লবিক চিন্তা হতে পারে বহুভাষিক চিন্তা এখন বাস্তবতা বলে তিনি মনে করেন কিভাবে পড়তে হয়, অন্যের চিন্তা ধরতে হয়, সেই সম্পর্কে তিনি বলেন, যেভাবে আমরা শব্দ, ব্যাকরণ, শব্দবিন্যাস দিয়ে অন্য ভাষা রপ্ত করি সেভাবেই আমরা আমাদের চিন্তায় তাদের চিন্তাকে ছেকে দেখতে পারি। তাদের চিন্তাকে রপ্ত করতে পারি।  

 

জ্ঞানের রাজনীতি উপনিবেশের কাল থেকেই চলেছে, এখনো চলছে। প্রাচ্যকে কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, ইসলামকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে এবং সর্বোপরি মুসলিমদেরকে কোন পরিচয়ে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তা গুরুত্বপুর্ণ। পাশ্চাত্যের বিশ্বরাজনীতির সাথে উদ্দেশ্যমূলক জ্ঞান জড়িত। তারা মুসলিমকে নির্দেশ করার জন্য, মুসলিম নিয়ে তাদের প্রকল্প ও প্রক্ষেপে, সবসময় জ্ঞানগত (প্র)কল্পকে আশ্রয় করে উৎপাদিত জ্ঞান প্রয়োগ করে। কাজেই ইসলাম ও মুসলিমকে উপস্থাপনার রাজনীতিকেও মুসলিমদের শনাক্ত করতে হবে সচেতনভাবে।

 

বেশিদিন আগের ঘটনা নয়, যখন নর্দমা থেকে কিলবিল করে উপচে পড়া তেলাপোকা হিসেবে ইরানকে চিত্রিত করে টম ডিসপাসে কার্টুন আঁকা হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলিম ও ইরানি কম্যুনিটি তীব্র রোষ ও ক্রোধে ফেটে পড়ে ইরানিদের তেলাপোকা হিসেবে চিত্রিত করার মাধ্যমে পুরো একটি জাতি সম্পর্কে জনমানসে বিকৃত প্রত্যক্ষণ তৈরি করে দেওয়ার প্রয়াস নেওয়া হয় এভাবে পাবলিক পারসেপশন তৈরির জ্ঞানকে ব্যবহার করে তেলাপোকা নিধনের জন্য সামরিক ক্ষমতা ব্যবহারের পক্ষে ভাবাবেগ তৈরির প্রয়াস নেওয়া হয় কে কীভাবে কাকে কোন কর্তৃত্বের বলে উপস্থাপন করে, তা এডওয়ার্ড সাঈদ দেখিয়েছেন তার, ‘রিপ্রেজেন্টেশনস অব দ্য ইন্টেলেক্টুয়াল’ এবং ওরিয়েন্টালিজম’ নামক গ্রন্থেকিন্তু ৯/১১-এর পর সাঈদের পর্যবেক্ষণকে নবতর বাস্তবতার আলোকে পরিমার্জিত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। হামিদ দাভাষি সেটিই করেছেন, তার সমস্ত লেখা জুড়ে।

 

ইসলাম ও পশ্চিমের মধ্যে এখন নতুন বিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছেবিশ্বপুঁজির সাম্রাজ্যবাদি আধিপত্যের বিপরীতে যে নতুন ধরনের প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে, তা সভ্যতার সংঘাতের এবং বিশ্ব রাজনীতির পুনর্বিবেচনা হিসেবে ধরে নিতে হবে। এগারোই সেপ্টেম্বরের পরে শান্তির বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের পর পাশ্চাত্য কিংবা আমেরিকা, এখন আর একক পরাশক্তি নয়উপনিবেশবাদের বিপরীতে ইসলামি ভাবাদর্শও ম্রিয়মাণ প্রায় যখন আমেরিকা বিশ্বের একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল তখন সাম্রাজ্যবাদি বিশ্বপুঁজির বিপরীতে নতুন ইসলামি ধর্মতত্ত্ব/ঈশ্বরতত্ত্বের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল সন্ত্রাসী হামলার বৈশ্বিক উত্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রচারযন্ত্রকে সন্ত্রাসের ভাবাদর্শ পেয়ে বসলে পশ্চিমা সভ্যতার প্রতিশোধের একটা প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইসলাম বিশ্বব্যাপী সভ্যতা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির বিরোধের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইসলাম বনাম পাশ্চাত্য হান্টিংটনসহ অন্যরা যেভাবে এটাকে সভ্যতার সংঘাত আকারে চিহ্নিত করেছিল, এটা তা নয় বরং অনেক আগেই আমরা সভ্যতার সংঘাতের কাল কাটিয়ে এসেছি সভ্যতাকেন্দ্রিক চিন্তার একটা হ্রস্ব কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো যখন য়ুরোপীয় আধুনিকতার সাথে ইসলামের মোকাবেলা চলছিল, বিশেষ করে উপনিবেশের যুগে এখন সভ্যতা-উত্তর জমানায় বৈশ্বিক সংঘাতের বোঝাপড়া নতুন করে করতে হবে নতুন বিশ্বশক্তিসমূহের ধরণ এবং জায়মান বিপ্লবী প্রতিরোধের হাবভাব বুঝতে হবে

 

ফানোঁ’র সময়ে আলজেরিয়াতে কালোদের মধ্যে যেভাবে বর্ণভিত্তিক লঘুতার অনুভূতি তৈরি করা হয়েছিলো, এখন বাদামি মুসলিমদের সম্পর্কেও একইরকম লঘুতার, হীনতার অনুভূতি তৈরি করা হচ্ছে। ইসলামভীতি তৈরি করে মুসলিমদের নতুনযুগের ইহুদিতে পরিণত করা হচ্ছে। কিন্তু ইসলাম পশ্চিমা গেজ থেকে মুক্তি পেলেও মুসলিমরা ইসলামকে কীভাবে নিবে সেটি এখনো নির্ধারণ করতে পারে নি। এখন ইসলাম ও মুসলিম নিজেদের দিকে তাকাতে গিয়ে, নিজেদের মাঝে পশ্চিমা জ্ঞান, প্রতিষ্ঠান, দৃষ্টিভঙ্গি এবং পশ্চিমা ছকে তৈরি শত্রুতার পক্ষ-প্রতিপক্ষ দেখতে পাচ্ছে। মুসলিমকে এখন পাশ্চাত্য নয়, মোকাবেলা করতে হচ্ছে নিজেদেরকেই। নিজেরাই নিজেদেরকে কীভাবে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছে, মুসলিমের বিমানবিকীকরণ করছে। নিজেদের পরিত্যক্ত জীবনাদর্শ ও সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করে ইসলামের মৌলিক বার্তাকে আত্মস্থ করা এবং সেটা দিয়েই নিজেদের দাঁড়ানোর জায়গা ঠিক করতে হবে। এটাই এখনকার মুসলিম সমাজের চ্যালেঞ্জ।

 

ইহুদিরাই এখন মুসলিমদেরকে নতুনযুগের ইহুদিতে পরিণত করছে। অন্যদিকে মুসলিম সমাজে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে তার সুযোগে সমাজে বিভেদ ও বিচ্ছেদের জায়গা বৃদ্ধি পেয়েছে। এইক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ইসলামের দুনিয়াবি রূপ ও দুনিয়াবি সংস্কৃতির নতুন ব্যাখ্যা দানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভাবে সমাজে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, মানুষের মানবিক সত্তা ও বিমানবিক রূপ এবং প্রযুক্তিসহযোগে মানুষের যে হাইব্রিড সত্তার উন্মেষ ঘটেছে তাকে কীভাবে শনাক্ত করা হবে এবং কোন নীতিতে মোকাবেলা করা হবে তাও নির্ধারণ করতে হবে।   

 

 

শেষকথা

পাশ্চাত্য এখন আর্থিকভাবে দেউলিয়া, রাজনৈতিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত, অর্থনৈতিকভাবে স্থবির এবং কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ। ফলে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি আর টেকছে না। বৈশ্বিক রাজনীতিতে আঞ্চলিক শক্তির উত্থানের কারণে আমেরিকার একচেটিয়া খবরদারি এবং পশ্চিমা জ্ঞানের মাস্টারি চলছে না। ফলে একক নেতৃত্বশূণ্যতার জায়গায় বেশ কিছু মাঝারি শক্তির উদ্ভব ঘটেছে এবং এভাবে বৈশ্বিক ক্ষমতা কাঠামোর নবরূপায়ন ঘটেছে। এই ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই ইজরায়েল ও ভারতীয় জোটের ডিপ ডেপ্লয়মেন্টের কাছে পদানত হয়েছে আরব বিশ্ব। ইরানকে নতুন করে টার্গেটের বস্তুতে পরিণত করার তোরজোড় চলছে। এইক্ষেত্রে হামিদ দাভাষি ইরান কেন বিশ্বসভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন ইরানকে হামলার লক্ষ্য করা উচিত নয়, সেই ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

 

মুসলিম সমাজের উপরে ভুতের মতো চেপে বসে আছে ছদ্মবেশি মুসলিম নেতৃত্ব, যার ভারে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ছিঁড় ধরেছে। মুসলিমরা দীর্ঘদিন ধরে পাশ্চাত্যের জ্ঞানজ রাজনীতির শিকার হয়ে জাতীয়তাবাদি ঐক্য মেনে নিয়েছে, ফলে তাদের সার্বিকতা নির্ভর ভ্রাতৃত্ববোধের ব্যাপক ক্ষয় হয়েছে। অন্যদিকে পুঁজি নিজেই ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্ধীরূপে হাজির হয়েছে। মুসলিম সমাজে জনগণ ও সরকারের মাঝে নতুন ক্রীড়ায় মেতেছে কর্পোরেট গোষ্ঠী। কোন কোন রাষ্ট্রে কর্পোরেট স্বার্থই জাতীয় স্বার্থ বলে গ্রাহ্যতা পাচ্ছে। জনগণ এখন বিভ্রান্ত। বুঝে উঠতে পারছে না, কাকে সে মোকাবেলা করবে? জাতীয়তা ও পরিচয়ের রাজনীতি মানবিক অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে ইহুদিরা এন্টিসেমিটিজমের অভিযোগে অভিযুক্ত করতে চাইছে হামিদ দাভাষিসহ মুসলিম চিন্তকদের। অন্যদিকে আরবীয় শাসকেরাও নিজেদের বুদ্ধিজীবীদের প্রতি চরম অসহিষ্ণু হয়ে ওঠছে।

 

এই পরিস্থিতিতে হামিদ দাভাষির ভূমিকা হয়তো জ্ঞানগত লড়াই, উপস্থাপনার রাজনীতি এবং চরবুদ্ধিজীবীদের খণ্ডনের তৎপরতায় সীমাবদ্ধ থাকবে। জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে অধিকতর গ্রহণযোগ্য অবস্থান নেওয়ার জন্য দাভাষিদের মতো চিন্তক ও ভাবুকের প্রয়োজন আছে। কিন্তু দাভাষির যে ভূমিকা, সেটাও শেষ পর্যন্ত এডওয়ার্ড সাঈদের মতো সাহিত্য ও তাত্ত্বিক বোঝাপড়ার মধ্যেই আটকে থাকবে, যদি মুসলিম সমাজ তাদের এই চিন্তাকে আত্মস্ত করতে না পারে, মত প্রকাশের অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করতে না পারে এবং সেই আত্মস্ত জ্ঞানের প্রতিফলন তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার রাজনীতি নির্ধারনে ব্যবহার করতে না পারে।

 

এখন চিন্তক হিসেবে দাভাষি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ সেই বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমাদের কতোজন দাভাষি দরকার সেটা বুঝা। ক্ষমতার যেমন আঞ্চলিক পুণর্বণ্টন ঘটেছে, ঠিক তেমনি জ্ঞান ও উপস্থাপনার রাজনীতির নতুন মেরুকরণ ঘটায় জ্ঞানভাষ্যের উৎপাদন ও পুনরুৎপাদনের লক্ষে স্থানিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। তাই সাঈদ কিংবা দাভাষির সিলসিলা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। এখন বুদ্ধিজীবীদের যেমন সমাজ ও রাজনীতিমনষ্ক হতে হবে, তেমনি তাদেরকে সমাজ থেকে একটি বিশেষ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, যাতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দৃষ্টিদোষে আক্রান্ত না হয়। প্রবাসি বুদ্ধিজীবীরা এই ক্ষেত্রে উভচর বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা নিতে পারে, যারা একইসাথে দেশে ও বিদেশে অবস্থান করে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা, নির্মোহতা এবং স্বাধীনতা উপভোগ করে। সাঈদের মতোই দাভাষি মনে করেন, উভয়চর বুদ্ধিজীবীদের বৈপ্লবিক হয়ে উঠার সম্ভাবনা বেশি। বিশ্বায়নের পরে অনেক বৈশ্বিক ব্যাপার আঞ্চলিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে, আবার অনেক স্থানীয় ব্যাপার বৈশ্বিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এইক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীরা শুধু আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় বোঝাপড়ার এজেন্ট নয়, বৈশ্বিক ঘটনার ঘটকে পরিণত হতে পারে। কারণ আমরা দেখেছি কীভাবে ইরানে হামলার প্রস্তুতি হিসেবে ইরানিদেরকে বিমানবিকীকরণ করার জ্ঞানজ রাজনীতি চলেছে।  

 

ইসলামের মতো সুশৃঙ্খল ও সুসংহত আদর্শ প্রতিরোধের আদর্শ হতে পারে কি না, সেটা নিয়ে বহু তর্ক আছে। বিশেষ করে উপনিবেশবিরোধী তৎপরতায় ইসলামের ভূমিকা ও কার্যকরতা নিয়ে অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু মুসলিমরা ইসলামকে কীভাবে দেখে ও দেখতে চায় তার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত, এবং ইসলামের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ সুসংহত না হওয়া পর্যন্ত এর ভূমিকা গৌণই থাকবে। পাশ্চাত্যে বিরাজিত ইসলামাতংকের দিকে দৃষ্টিপাত করলে বুঝা যায়, এখনো  তারা ইসলামকে প্রতিরোধের শক্তি হিসেবে কল্পনা করে, যদিও এটি এখন প্রতিরোধের আদর্শ হিসেবে কোথাও সক্রিয় নয়। মাইক্রো লেভেলে ইসলাম আতঙ্কের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে মুসলিম আতঙ্ক। ফলে তারা মুসলিম পরিবার, পারিবারিক সংস্কৃতি, এমনকি প্রজননের অধিকার নিয়েও শঙ্কিত। এখন মুসলিমরা যেসব দেশে সংখ্যালঘু সেসব দেশে বায়োপলিটিক্সের টার্গেটে পরিণত হয়েছে মুসলিম জনসংখ্যা। জনসংখ্যা এখন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। অন্যদিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশেও ইসলাম আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। কর্পোরেট গোষ্ঠী ও গ্লোবাল মিডিয়ার দেশি এজেন্টরা এই ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। ফলে দাভাষি যেমনটা বলছেন, প্রাচ্যের লোকেরা চিন্তা করতে পারে কি না, সেটা দেখা যাবে তারা নিজেদেরকে কীভাবে দেখে, বর্ণনা করে এবং তার ভিত্তিতে তাদের ওপর চাপানো দুর্বৃত্তায়িত জ্ঞানকে কীভাবে খণ্ডন করতে পারছে তার ওপর। আক্রমণ ও হামলার পরিবেশ তৈরি করার জন্য যে জ্ঞান তৈরি করা হয়, সেই জ্ঞানকে চেক দেওয়াই হলো পাশ্চাত্য মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার। দাভাষি পাঠ করে আমরা অন্তত এইটুকু শিখতে পারি।      

 

 

গ্রন্থপঞ্জী:

Dabashi, Hamid. Islamic Liberation Theology, (New York: Rutledge, 2007).

-------------Post-orientalism: Knowledge and Power in the time of Terror, (New Jersey: Transaction Publishers, 2009).

-------------Brown Skin, White Mask, (New York: Pluto Press, 2011).

-------------The Arab Spring: The End of Postcolonialism, (London: Zed Books Ltd, 2012).

-------------Being a Muslim in the world, (New York: Palgrave Macmillan, 2013).

-------------Can Non-Europeans Think?, (London: Zed Books Ltd, 2015).   

 

 

 

Comments

Popular posts from this blog

মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার

সরওয়ার কামাল শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় ভালো, যা সম্পর্কে প্রশংসা করে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রবন্ধ লিখেছেন “ ল্যানসেট ” নামক মেডিক্যাল জার্নালে। কিন্তু এতে আমাদের বগল বাজিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়া এবং বিজ্ঞান শিক্ষা সংকুচিত হয়ে পড়া আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণে আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্যগুলো হাসিল হচ্ছে না, যার একটি হলো সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, অপরটি হলো শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা। অর্থাৎ সব শিশুই যাতে সরকারের সুযোগ ব্যবহার করে উন্নত জীবনের সন্ধান করতে পারে, তার শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, তার মধ্যে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রধান কারণ দারিদ্র্য ও অপুষ্টি বা স্বাস্থ্যহীনতা । মাধ্যমিক পর্যায়েও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে দারিদ্র্য সমস্যার ...

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনা জালে

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনা জালে ............................................................................... সাম্প্রতিক কালে আমাদের নৈতিক উপলব্ধিতে, সামাজিক উদ্বেগে কিংবা মূল্যবোধে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। প্রযুক্তির নিবিড় ব্যবহার, বিশ্বায়নের প্রভাব, বিশ্বরাজনীতির অভিঘাত, বাজার সংস্কৃতির ধাক্কা ও চরমপন্থী ভাবাদর্শের টানাপড়েনে আমাদের চিরকালীন মূল্যবোধ ভেঙ্গে পড়েছে। নৈতিকতার সীমানা সরে যাচ্ছে প্রথাগত বিশ্বাস ও প্রতিষ্ঠানসংলগ্নতা থেকে। গতিময় জীবনের অভিঘাতে চরম অস্থিরতা ব্যক্তি থেকে ব্যষ্টির ব্যাপ্তিতে বিরাজ করছে। সর্বত্র আহাজারি, শোনার অবসর নিয়ে হাজির নেই কেউ। মানুষ যে নির্বিকার তাও নয়, তারা বিকারগ্রস্থ, পূর্ণমাত্রায় ঘোরগ্রস্থ, কেবল অপ্রত্যাশিত ঘটনাপ্রবাহের সাথে তাল মেলানোতে। তারা এখন এমন সব বিষয়ে আলোড়িত হয়, যে বিষয়ের সাথে তাদের সরাসরি যোগ নেই। থাকলেও তা অনেক ক্ষীণ ও দূরবর্তী কার্যকারণ সম্পর্কে আবদ্ধ। একইভাবে, তারা এমন সব পরিণতি ভোগ করে, যার জন্য তারা নিজেরা দায়ী নয়। আর যারা দায়ী তারা এর পরিণতি ভোগ করেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ বয়সের দিকে এই প্যার...

মহেশখালীর সমাজ ও সংস্কৃতি

সরওয়ার কামাল সাগর কূলে গিরিকুন্তলা মোহিনী মহেশখালী দ্বীপের ৩৮৮ বর্গকিলোমিটার ভূত্বকে প্রায় পাঁচ লক্ষ লোকের বসতি। তাদের বসতি ঘিরে গড়ে উঠেছে উপকূলীয়-দ্বীপাঞ্চলীয় সমাজ। এই সমাজসভ্যদের মানসিক ঐক্য ও জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হয়েছে শনাক্তযোগ্য বিশেষ স্থানীয় সংস্কৃতি। মানবজাতির চিরকালীন অভিযাত্রার অংশ হিসেবে দেশের নানা জায়গা থেকে হিজরত করে লোকজন এসে বসতি গেড়েছে মহেশখালীতে। তাই তাদের ভাষা ও আচরণে শনাক্ত করা যায় এমন বৈচিত্র্য ও তারতম্য, যা দিয়ে কক্সবাজারের অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের তুলনায় মহেশখালীবাসীকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করা যায়। যে পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ঠ্যাবলী নিয়ে মহেশখালীর সমাজ ও মানুষের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য তৈরি হয়েছে, চাটগাঁইয়া ভাষার উপভাষাতুল্য মহেশখালীর দ্বীপাঞ্চলীয় বুলি তার মধ্যে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। [1] তবে সমস্যা হলো, লিখিত সাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অভাবে স্থানীয় ইতিহাসের মতোই কালিক সূচকের নিরিখে এর জনসংস্কৃতি বর্ণনা করা দুরূহ। একেতো সংস্কৃতি স্বয়ং একটি ব্যাপক ধারণা, তদুপরি, এটি সতত পরিবর্তনশীল। ভাষা ও সংস্কৃতি স্রোতস্বী নদীর মতো বহমান। মানুষের কথা, স্মৃতি, পুরা...