Skip to main content

পিরামিড সংসার

পাথরে শ্যাওলার মতো পড়ে আছে মন
পিরামিড সংসারে বেঁচে আছি মমির মতন”।
            ...ময়ুখ চৌধুরী, পিরামিড সংসার।
মিশরে ফারাওদের সমাধি যদি নাও থাকতো পৃথিবীতে অনিবার্যভাবে পিরামিড থাকতো। কারণ পিরামিড শুধু গাণিতিক কিংবা জ্যামিতিক গঠন হিসেবে নয় যৌক্তিক আকার হিসেবেও অনিবার্য। প্রচলিত যুক্তিবিদ্যার জনক, গ্রীক দার্শনিক আরিস্তোতল ন্যায়ানুমান বলে যে যৌক্তিক আকার প্রস্তাব করেছেন তা ত্রিমাত্রিক। তিন পদ আর তিন বচন। দুইটি দ্বিপদি বাক্যের যে কোন দুইপদের অভিন্নতার ভিত্তিতে একটি যোগসূত্র স্থাপিত হলে তার নাম দাঁড়ায় মধ্যপদ। এই মধ্যপদের দূতিয়ালিতে প্রধান পদ ও অপ্রধান পদের কুটুম্বিতা গ্রাহ্যতা না পেলে অনুমানের কোন মান থাকে না। ব্যক্তিগত অভিমান নিয়ে নিঃসঙ্গ বাক্যগুলো কেবল দুইপদে ভর করে সমান্তরালে চলে। এদিকে, আমাদের জীবনাস্তিত্বের বৃত্তাবদ্ধতায় দুই পা বিশিষ্ট মানব-মানবী যে সংসার পাতে, তাতেও একটি তৃতীয় মাত্রার আবির্ভাব না ঘটলে সংসার ঠিক পিরামিডের মতো বয়সী হয় না। অবশ্য কাণ্ডজ্ঞানের সাথে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আপাত বিরোধ নিয়ে কেউ তর্ক করতে আসলে সে ভিন্ন কথা।

আমাদের বঙ্গীয় উপসাগরের উজানে অজস্র জলপরী নদী মোহনায় নেমে এসে সাগরের সাথে সংসার পাতে। যে নদী মোহনায় মাতাল, তরঙ্গে তরঙ্গে যার উল্লাস, তার বিপরীতে সংসারের দায়ভার নিয়ে বারুদের গন্ধে ফুল দেখতে অভ্যস্ত পুরুষের রৌদ্র দগ্ধ স্মৃতি উল্লাসের নয়। এটা কিছুটা লাশের, যে লাশ হয়তো মমি হওয়ার বাসনায় পিরামিড বানায়। অসংখ্য পিরামিডের ভেতর আমাদের যাপিত জীবন, যেখানে পিতা,মাতা ও শিশু গড়ে তোলে আরেক পিরামিড। যে শিশু মায়ের আঁচল হতে বিচ্ছিন্ন, যে শিশু কাদামাটির ঘ্রাণ আর নদীর গতিপথ ভুলে গেছে, তার দায়ভার কে নেবে? মাটির ওপর দোফাল্লা তাঁবুতে যে জীর্ণ পিরামিড, তাতে মাতৃহারা শরণার্থী শিশুর ক্রন্দন কেবল পুরুষের দায়ভার বাড়িয়ে তোলে। শিশুকে তাই মায়ের আঁচলে বেঁধে দিয়ে নিঃসঙ্গ পুরুষ মমির আসনে শুয়ে পড়ে, পিরামিড সংসারে মমি হওয়ার বাসনায়।

Comments

Popular posts from this blog

মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার

সরওয়ার কামাল শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় ভালো, যা সম্পর্কে প্রশংসা করে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রবন্ধ লিখেছেন “ ল্যানসেট ” নামক মেডিক্যাল জার্নালে। কিন্তু এতে আমাদের বগল বাজিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়া এবং বিজ্ঞান শিক্ষা সংকুচিত হয়ে পড়া আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণে আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্যগুলো হাসিল হচ্ছে না, যার একটি হলো সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, অপরটি হলো শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা। অর্থাৎ সব শিশুই যাতে সরকারের সুযোগ ব্যবহার করে উন্নত জীবনের সন্ধান করতে পারে, তার শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, তার মধ্যে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রধান কারণ দারিদ্র্য ও অপুষ্টি বা স্বাস্থ্যহীনতা । মাধ্যমিক পর্যায়েও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে দারিদ্র্য সমস্যার ...

মহেশখালীর সমাজ ও সংস্কৃতি

সরওয়ার কামাল সাগর কূলে গিরিকুন্তলা মোহিনী মহেশখালী দ্বীপের ৩৮৮ বর্গকিলোমিটার ভূত্বকে প্রায় পাঁচ লক্ষ লোকের বসতি। তাদের বসতি ঘিরে গড়ে উঠেছে উপকূলীয়-দ্বীপাঞ্চলীয় সমাজ। এই সমাজসভ্যদের মানসিক ঐক্য ও জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হয়েছে শনাক্তযোগ্য বিশেষ স্থানীয় সংস্কৃতি। মানবজাতির চিরকালীন অভিযাত্রার অংশ হিসেবে দেশের নানা জায়গা থেকে হিজরত করে লোকজন এসে বসতি গেড়েছে মহেশখালীতে। তাই তাদের ভাষা ও আচরণে শনাক্ত করা যায় এমন বৈচিত্র্য ও তারতম্য, যা দিয়ে কক্সবাজারের অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের তুলনায় মহেশখালীবাসীকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করা যায়। যে পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ঠ্যাবলী নিয়ে মহেশখালীর সমাজ ও মানুষের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য তৈরি হয়েছে, চাটগাঁইয়া ভাষার উপভাষাতুল্য মহেশখালীর দ্বীপাঞ্চলীয় বুলি তার মধ্যে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। [1] তবে সমস্যা হলো, লিখিত সাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অভাবে স্থানীয় ইতিহাসের মতোই কালিক সূচকের নিরিখে এর জনসংস্কৃতি বর্ণনা করা দুরূহ। একেতো সংস্কৃতি স্বয়ং একটি ব্যাপক ধারণা, তদুপরি, এটি সতত পরিবর্তনশীল। ভাষা ও সংস্কৃতি স্রোতস্বী নদীর মতো বহমান। মানুষের কথা, স্মৃতি, পুরা...

মনোদর্শন

মনোদর্শনের কথামুখ দর্শনের একটি সরল সংজ্ঞার অভিপ্রায়ে আমরা বলতে পারি, দর্শন হলো জীবন, জগত ও পরমসত্তার প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে যৌক্তিক ও সার্বিক ব্যাখ্যা দানের প্রচেষ্টা। অনুরূপভাবে বলা যায়, মনোদর্শন হলো দর্শনের সেই শাখা যেখানে মনস্তত্ত্বের দর্শন বা দর্শনের মনস্তত্ত্বসহ মানসিক বিষয় কিংবা মানসিক প্রপঞ্চের স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করা হয়, যে বিষয়গুলো কার্যকারণগত দিক থেকে সত্তার কাঠামোর সাথে সম্পর্কিত। মূলত মনোদর্শন হলো মন, মনের ধারণা, মনের স্বরূপ, মানসিক ঘটনা, মনের কার্যাবলি, চেতনা ও সর্বোপরি দেহের সাথে চেতনার সম্পর্ক নিয়ে দার্শনিক অনুসন্ধানের প্রয়াস। আরও বিস্তৃত পরিসরে মনোদর্শনের বিষয়বস্তু নিয়ে আলাপের অবতারণা করলে মনের ধারণা, চেতনার স্বরূপ, প্রত্যক্ষন, সংবেদন, চেতনা, চেতনার কর্তা, আত্মজ্ঞান, অন্তর্দর্শন, কল্পনা, বিশ্বাস, আকাংক্ষা, অভিপ্রায়, দৈহিক ঘটনার সাথে মানসিক অবস্থার সম্পর্ক, অভিন্নতাতত্ত্ব, ব্যক্তিত্ব, মনোবিজ্ঞানের অন্যান্য প্রত্যয়, তত্ত্ব ও মডেলসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে হয়। কাজেই দর্শনের একটি নতুন শাখা হলেও মনোদর্শনের বিষয়বস্তু যথেষ্ট সমৃদ্ধ, জটিল ও আন্তর্বৈষয়িক ...