সরওয়ার কামাল
কাতারের রাজধানী দোহায়, পারস্য উপসাগরে কৃত্রিম দ্বীপে, নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত 'মিউজিয়াম অভ ইসলামিক আর্টস' সাংস্কৃতিক পর্যটনের এক আকর্ষণীয় স্থান। ইসলামি শিল্প-সংস্কৃতির এই অপূর্ব সংগ্রহশালার নকশা করেছেন বিখ্যাত চীনা-মার্কিন স্থপতি আই এম পেই। যিনি নকশার সাংস্কৃতিক চেতনা আত্মস্থ করার জন্যই পরিভ্রমণ করেছেন মুসলিম বিশ্বের নানা প্রান্ত। জ্যামিতিক বিশুদ্ধতায় নিপুণ কুশলে নির্মিত ভবনে সূর্যালোক যেন রেম্ব্রান্ট চিত্রকলার মতো কিরণকেলিতে মাতে সারাদিন। ধবল মুক্তো রঙের পাথরে নিপাট পারিপাট্যে সজ্জিত জাদুঘরটি ২০০৮ সালের ২২ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। এতে ৭ম শতক থেকে ২০শ শতক পর্যন্ত প্রায় চৌদ্দশো বছরের ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতির দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। মূলত তিনটি মহাদেশ থেকে সংগৃহীত ধাতব শিল্প, মৃৎশিল্প, গহনা, কাঠ ও বস্ত্রশিল্প, কাঁচের শিল্পকর্ম, মুদ্রা এবং দুর্লভ পাণ্ডুলিপি স্থান পেয়েছে।
শুরুতেই জাদুঘরের নিচতলায় ইসলামি খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আয়োজিত একটি প্রদর্শনীতে উঁকি দিলাম। ইসলামে খাদ্যকে শুধু উদরপূর্তি নয়, বরং রোগনিরাময়ের একটি কৌশল হিসেবে ভক্ষণ করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবেশন এবং ভোজনের জন্য রয়েছে সুন্নাহ এবং বিশেষ ইসলামি সংস্কৃতি। প্রদর্শনীতে কুরআন, সুন্নাহ এবং সংস্কৃতির আলোকে খাদ্যের ইসলামি ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। খাদ্য থেকে কীভাবে অধিকতর ফায়দা ও বরকত হাসিল করা যায় তার নির্দেশনা রয়েছে সুন্নাহ ও ঐতিহ্যে। রসুইঘরের একটি ইসলামি রুচি, ঘ্রাণ এবং আদবের পরিবেশ আছে। সামগ্রিকভাবে ইসলামি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে খাদ্যের রোগানিরাময়ী ভূমিকা যুক্ত করে খাদ্যের একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা জ্ঞাপনের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে এই প্রদর্শনীতে।
দু'তলায় উত্তরণের পর ইবনে সিনার লেখা রোগনিদানবিদ্যার বই 'কিতাব আল কানুন ফিততিব’ দেখে কিছুক্ষণ থ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কী এক সমৃদ্ধ কিতাব! কত যত্নে, কত নৈপুণ্যে, কত সাধনায় এই কিতাব লিখেছেন, দেখলেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়। আবুজ ফজল হুবায়েস বিন ইব্রাহিম আল মুনাজ্জিম আল তিফলিসি রচিত জ্যোতির্বিদ্যার কিতাব, সেও মানবীয় মনন সৌকর্যের এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন। হাসান চালেবি ইবনে মুহাম্মদ শাহ আল ফুনারি রচিত কমেন্টারিও পাণ্ডিত্যের স্বাক্ষর বহন করছে। এতে হিজরি প্রথম শতকে লিপিবদ্ধ কুরআনের বেশ কিছু নমুনা রয়েছে, যেগুলো গাছের বাকলে, চামড়ায় কিংবা কাগজে লিখিত হয়েছে। পাণ্ডুলিপিগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ স্বর্ণখচিত নকশা দ্বারা শোভিত। মানুষের মনন, সাধনা ও শৈল্পিক নৈপুণ্যের যেন বর্ণাঢ্য সমাবেশ ঘটেছে এসব পাণ্ডুলিপির প্রতি পৃষ্ঠায়। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে ভারতীয় মুঘলদের কিছু রাজকীয় নিদর্শনও। মুঘলদের তুঙ্গীয় জৌলুশপূর্ণ সংস্কৃতি কতোটা ইসলামি তা নিয়ে বিবাদ থাকতে পারে, কিন্তু মুঘলরা তাদের চিন্তায় ইসলামি কল্পনা ও যুক্তি-আকারের রূপায়ন ঘটিয়েছেন তাদের স্থাপত্য, অলঙ্কার, পোষাক, খাদ্যাভ্যাস এবং রাষ্ট্রাচারে। সামরিক সরঞ্জাম ও ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য একটি বিশেষ কক্ষ রয়েছে জাদুঘরে। সেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত উপকরণাদি প্রদর্শিত হয়েছে।
বিগত চৌদ্দশো বছরে ইসলামি সভ্যতা নানা চড়াই-উৎরাই পার করেছে। এই সময়ে ইসলামের চিন্তাগত, প্রযুক্তিগত, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সভ্যতাগত পরম্পরা ও ঐতিহ্যের সম্ভার সৃষ্টি হয়েছে। তাই ইসলামকে তার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলসমেত বুঝার ক্ষেত্রে ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শনগুলো উপযুক্ত পরিপ্রেক্ষিত যোগায়। কিন্তু বিশ্বের নানা প্রান্তে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা ইসলামী ঐতিহ্যের স্মারক, গৌরবময় উপাদান এবং জ্ঞানগত সমৃদ্ধির চিহ্নগুলো একত্রে এনে একে একটি অর্থবহ সমগ্রতা দেওয়ার জন্য বিশেষ ধরনের উদ্যোগ দরকার। জাদুঘর ও পাঠাগার হচ্ছে সেই ধরনের প্রয়াস, যা ইসলামের বৈশ্বিক স্বরূপ এবং কালেকালে বেগবান তুরীয় ভাবনাকে সংহত করে
ইসলামী
ঐতিহ্য শুধু সাংস্কৃতিক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, এটি ধর্মবিশ্বাস ও বৌদ্ধিক
সক্রিয়তার ক্ষেত্রেও নতুন আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করে। ইসলামকে তার মূল সমৃদ্ধির জায়গা
থেকে দেখার সুযোগ তৈরি করে। কালিক পরিভ্রমণের মাধ্যমে ইসলামের শাশ্বত স্বরূপ
শনাক্তির ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দেয়। চৌদ্দশো বছরে আরব, পারস্যদেশ, কর্ডোভা, আফগান
হয়ে হিন্দুস্তান পর্যন্ত সুবিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে বর্ণাঢ্য
রাষ্ট্রিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করে। ইসলাম প্রসারের সাথে সাথে নতুন নতুন
দেশব্যাপে নব নব রেওয়াজ-রীতি ও উপকরণ তৈরি হয়েছে। নিয়ম-নীতি ও অভ্যাস অনুসৃত
হয়েছে। সে সবের অন্তরালে ফল্গুধারার মতো বহমান ছিল ইসলামি কল্পনা ও মধ্যপন্থী
যুক্তিশীলতা।
কী নিদারুণ বৈরি পরিবেশ এবং কী কঠোর সাধনার মধ্য দিয়ে মুসলমান ভাবুকগণ তাদের চিন্তার মধ্যে ইসলামী ও প্রায়োগিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে বিশ্বচিন্তাজগতকে সমৃদ্ধ করেছেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের ভাবনাবিধৃত কিতাবাদিতে। তাদের সৃষ্ট আচার-কৃষ্টিতে। নতুন প্রজন্মের জন্য, বিশেষ করে যারা নিজেদের বিশ্বাস-ব্যবস্থা ও ঐতিহ্য নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে, তাদের জন্য দৃষ্টি উন্মোচনকারী শিখনের জায়গা হতে পারে কাতারের 'মিউজিয়াম অভ ইসলামিক আর্টস'। এই ধরনের জাদুঘর পরিদর্শন মুসলমানের উন্নততর মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের গুরুত্ব সম্পর্কেও সংবিৎ ফেরাতে পারে। ইসলামবোধের জায়গা থেকে যে ইতিহাস চেতনা অর্জন করা দরকার, তার সূত্রপাত ঘটাতে পারে এই ধরনের জাদুঘর। অবশ্যই দেশ-কাল ভেদে ইসলামি সংস্কৃতির ভিন্নতা রয়েছে। তবে ভিন্নতা ও বিচিত্রতার মধ্যেও কিছু অন্তর্গত ঐক্য নিহিত রয়েছে। তা টের পাওয়া যায়, চিরায়ত ইসলামি ঐতিহ্যের তুরীয় স্বরূপের দিকে দৃকপাত করলে, বিশেষ করে কীভাবে ধ্রুপদী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কাল পরম্পরায় মৌলিক কিছু নীতি মেনে কালের অভিমুখে ধাবিত হয়েছে, তার দিকে নজর দিলে। ইসলামের বিস্তার এবং সুশৃঙ্খল ফিকাহশাস্ত্রের উদ্ভবের সাথে সাথে ইসলামি জ্ঞানচর্চা কেলাসিত হয়ে অধিকতর যুক্তিশীলতা অর্জন করেছে। কিন্তু পরবর্তীকালে মুসলমানদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জ্ঞানচর্চার চেয়ে রাষ্ট্রকর্মের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। ফলে জ্ঞানচর্চা হয়ে পড়েছে গুরুত্বহীন প্রান্তবর্তী সঙ্গহীন সাধকের কাজ। কাজে কাজেই মুসলমান সমাজে শিক্ষকদের গুরুত্বও ক্রমে কমতে শুরু করেছে।
সংগ্রামমুখর পার্থিব জীবনে টিকে থাকতে মানুষের মনের জোর ও হিম্মত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সভ্যতার ইতিহাস ও ইতিহাসের যৌক্তিক ব্যাখ্যা থেকে যদি মানুষ মনোবল খোঁজে না পায়, তাহলে সে দিশেহারা হয়ে পড়তে পারে। ইতিহাস সম্পর্কে ভালো বোঝাপড়া মনোবল বৃদ্ধি করে। কারণ ইতিহাস কেবল তথ্য উপাত্তের সমাহার নয়, এটি সাংস্কৃতিক শক্তিরও উৎস। ইতিহাসের উপাদানগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে ইতিহাস। অনেক ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন না থাকার কারণে মানুষ ইতিহাস থেকে সঠিক অর্থ তৈরি করে নিতে পারে না।
ইসলামি ঐতিহ্যসমূহ তার জ্ঞানকাণ্ড, কালামশাস্ত্র, রোগনিদানবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, গূঢ়তত্ত্ব, শরিয়া, দর্শন এবং মুসলমানদের মানস গঠনে ভূমিকা রেখেছে। তারা যেসব নতুন ধ্যানধারণা গ্রহণ করেছে, অভ্যাস আত্মস্থ করেছে, মূল্যবোধ অর্জন করেছে, তার পেছনে কাজ করছে ইসলামি চেতনা ও কুরানি মানদণ্ড। ভালো ও মন্দের, গ্রহনীয় ও বর্জনীয়ের ফারাক বুঝতে আইন ও শরিয়ার সাথে সাথে কালাতিক্রমি সাংস্কৃতিক ইতিহাসেরও পাঠ দরকার।
ইসলাম নতুন কোন ধর্ম নয়, এটি হযরত আদম (আ:) থেকে শুরু হয়ে নবী করিম (সা:) পর্যন্ত খোদায়ী ওহি ও রিসালাতের মাধ্যমে অতি পুরনো একত্ববাদের নব রূপায়ন। কুরআনকে সংরক্ষণ করার জন্য কাতেবগণের যে শৈল্পিক প্রয়াস, উত্তরসূরীদের যে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইসলামি ঐতিহ্য। ক্যালিগ্রাফি, পুস্তক ও পুস্তানি, কাগজ, কালি ও কলমের ব্যবহার, সুগন্ধি ও কাঞ্চনরেখার কারুকাজ মিলে সমৃদ্ধ ইসলামিক ঘরানা রয়েছে। সাংস্কৃতিক সামর্থ্যের জায়গা থেকে বিবেচনা করলে জাদুঘরে সংরক্ষিত নিদর্শনগুলো নিঃসন্দেহে অমূল্য রতন, যা আমাদের বস্তুজগৎ ও ভাবনাজগতের মেলবন্ধন ঘটিয়ে আত্মপরিচয়ের একটি নতুন তাৎপর্য উন্মোচিত করে, নতুন অর্থ তৈরি করে।
ইসলামি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম উৎস কুরআন। কুরআন হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে চূড়ান্ত নিদর্শন, চিহ্ন এবং পথনির্দেশ। বিমূর্ত ইশারা। এটি একটি কসমিক স্তরের চিন্তাদর্শনের কেতাব। এই মহাজাগতিক আদর্শ আল্লাহর নির্দেশনা থেকেই এসেছে। আল্লাহ নিজেই এই মহাজগতের অভিভাবক, মহাজগতের সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। তার দেখানো পথেই বিশ্বব্যাপী একটি ইসলামি কৌমসমাজের, উম্মার আদর্শ বিবৃত হয়েছে। সেই আদর্শে দেশ-কাল নির্বিশেষে ভ্রাতৃত্ববোধের চিরায়ত পরম্পরার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইসলামে একে অপরকে ভাই বলে সম্বোধন করা হয়। ইসলামি শিল্পেও, তাই, কুরআনের তাৎপর্যপূর্ণ উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। কুরআনকে কেন্দ্র করে শিল্প ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্পষ্ট মূলধারা আছে।
কুরআনের রয়েছে বিস্তৃত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সুবিন্যস্ত মতবাদ বা ধর্মতত্ত্ব, বর্ণনা ও বয়ান, গুঢ়-মরমী ব্যাখ্যা। ইসলামি শিল্প ও ঐতিহ্যে বিকাশের ক্ষেত্রে এই চারটি দিকই ভূমিকা রেখেছে। ইসলাম বৈপ্লবিক চেতনার মধ্যেও একটু রক্ষণশীল ভাবধারা বজায় রাখে, নতুন-পুরাতনের, যুক্তিশীলতা ও ঐতিহ্যের, ধনী-গরীবের সমন্বয়ধর্মী অন্তর্ভুক্তি বজায় রাখে। মানুষ সাধারণত তার ব্যক্তিজীবন, সমাজ ও পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কুরআন তার দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যায়। তাকে একটি মহাজাগতিক বলয়ের অনুভূতি দেয়, যেখানে সে তার স্থান-কালিক প্রতিবেশের যাবতীয় ফেতনা ও প্রলোভন থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে খোদায়ী জগতের দিকে তাকাতে পারে। বেহেশত ও দোযখের সীমা সম্পর্কে অবগত থাকতে পারে।
মানুষের জীবনের প্রকৃত ও প্রতিকী দুইটি অর্থ আছে। প্রকৃত অর্থে মানুষের লক্ষ্য একজন পূর্ণ মানব হয়ে ওঠা, কিন্তু প্রতিকী অর্থে মানুষ নিজেই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সৃষ্ট। এই উদ্দেশ্যের দিকে পথ সন্ধানী মানুষের জন্য খোদার পক্ষ থেকে দিকনির্দেশিকা হচ্ছে কুরআন। তাই কুরআন ব্যতীত মানুষ নিরর্থক। কুরআন মনুষ্যজীবনকে সার্থক করে, অর্থপূর্ণ করে।
ইসলামে
যুগযুগ ধরে বড় বড় ধর্মতাত্ত্বিক, কালামশাস্ত্রবিদ যেমন ছিলেন, তেমনি বড় বড়
দার্শনিকও ছিলেন। যদিও অনুধ্যানমূলক দর্শনের বিরুদ্ধে ইবনে খলদুন এবং ইমাম গাযালির
আপত্তি রয়েছে। কিন্তু ইবনে সিনা, মোল্লা সাদরা এবং শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভির
মতো সাধক-লেখক বিশ্বজগতের যে কোন শ্রেষ্ট লেখকদের কাতারভুক্ত। ইদানীং ধর্মনিরপেক্ষ
স্কলারশিপের জায়গা থেকে পশ্চিমা জগতে ইসলামকে বোঝার প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। তাদের
গবেষণা পদ্ধতিতত্ত্ব, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানচর্চার বর্ণাঢ্য
আয়োজন দেখে সবাই বিমোহিত। কিন্তু তাদের সেক্যুলার ভাষা এবং যথাযথ ইসলামি আদবের
অভাব ইসলামি জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যিক পরম্পরার সাথে সাংঘর্ষিকতা দোষে দুষ্ট। ইসলামের
পশ্চিমা গবেষণা সাহিত্য সেক্যুলার ইন্টারপ্রেটেনশনের মাধ্যমে অনাহুত কলরব ও
ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে। তাই, সত্যের খাতিরে, ইসলামের তুঙ্গীয় পণ্ডিতদের তাফসিরগুলো
যথাযথ আদবের সাথে অধ্যয়নের সক্ষমতা অর্জন করা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।
সেইক্ষেত্রে, না বললে নয়, ইসলামি জাদুঘর ও ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা উপযুক্ত রসদ যোগাতে
পারে।


Comments