Skip to main content

২৯ এপ্রিল: আমরা মরি, কেবল আমাদের বাঁচার আকাঙ্ক্ষাটা মরে না

২৯ এপ্রিল
 আমরা মরি, কেবল আমাদের বাঁচার আকাঙ্ক্ষাটা মরে না   


APRIL is the cruelest month, breeding
Lilacs out of the dead land, mixing
Memory and desire, stirring
Dull roots with spring rain.
                              T S Eliot, The waste land.

সত্যিই, এপ্রিল নিষ্ঠুরতম মাস বাংলাদেশের দক্ষিণ জনপদে এপ্রিল কত নিষ্ঠুরভাবে আসে  এবং কত গভীরে তার দাগ রেখে যায় তা বুঝার জন্য টি এস এলিয়টের কবিতা পড়ার দরকার নেই। উপকূলের মাটিলগ্ন মানুষের কাছে এপ্রিল কার্যত মৃত্যুর মাস। কুলি, মজুর, জেলে, চাষা, গ্রামবাসী মেহনতি মানুষ, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার বুকে আছে এপ্রিলের করুণ দগ্ধ ক্ষত উপকূলের নরম মাটিতে লেপ্টে থাকা অসংখ্য লাশের দৃশ্য আমাদের মস্তিষ্কের কোটরে স্নায়ুকোষের আর্কাইভ থেকে ক্ষণে ক্ষণে উঁকি মারেস্মৃতির পর্দায় ২৯ এপ্রিলের আবির্ভাব আমাদের শোকাতুর করে। দুঃসহ অভিজ্ঞতার সম্ভাব্য পুনরাবৃত্তিও ভয়ানকভাবে উদ্বিগ্ন করে।

সাগরের কিনারে থাকা মানুষের আছে আলাদা অশ্রুত আখ্যান, যা কখনো মূলধারার ফ্রেমে বাঁধা পড়ে না। তাই জাতীয় গ্যালারির প্রদর্শনীতে এর জায়গা জুটে না। মূলতঃ ধূসর ধ্বংসস্তূপই উপকূলীয় জীবনের করুণ ক্যানভাস। আমাদের গভীর বোধে অভিঘাত ফেলে মাতাল সমুদ্রের রুদ্র রোষ, তীব্র বাতাসের অহর্নিশ ঝংকার, লবণ পানির ধ্বংসাত্মক হানা আর প্রলয়ঙ্করী প্লাবন। উপকূলে বসত করা মানে সমুদ্রের সাথে যুদ্ধ করে সমুদ্রের সাথেই মিত্রতা মানা প্রকৃতির সাথে, বিশেষ করে সমুদ্রের সাথে এক ধরনের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা প্রতিনিয়ত চলে। এই যুদ্ধে আমরা কখনো জিতি না। সব সময় হারি। তারপরও সমুদ্রের সীমাহীন সম্পদের প্রাচুর্যে আমাদের বাঁচার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেন মরেও মরে না। আমরা বারবার ঘুরে দাঁড়াই। ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে নতুন করে জীবন সাজাই, বাঁচার তাগিদে, জীবন যাপনের শেষ অবলম্বনটুকু নিয়ে আবার নেমে পড়ি জীবনের আয়োজনে।  আমাদের এই কোমর বেঁধে ওঠে দাঁড়ানোকে ভদ্রলোকেরা বলে রেজিলিয়েন্স

বঙ্গোপসাগরের উপকুলবর্তী অঞ্চল তীব্রভাবে ঘূর্ণিঝড় প্রবণ। অতীত পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘুর্নিঝড়্গুলোর বেশিরভাগেরই উৎপত্তি আন্দামানের কাছাকাছি। কারণ, বঙ্গোপসাগর থেকে আন্দামান অঞ্চল পর্যন্ত সমুদ্রে প্রাথমিকভাবে ঘুর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার জন্য ২৭ ডিগ্রি তাপ মাত্রাই যথেষ্ট। এই তাপমাত্রায় সমুদ্রের ওপরের বায়ুমণ্ডলে আড়াআড়ি শূন্যতা তৈরি হয়। পৃথিবীর ঘুর্ণন এবং আহ্নিক গতির কারণে এই শূন্য স্থানে পার্শ্ববর্তী ঠাণ্ডা বায়ুর আগমন ঘটে। পৃথিবীর ঘূর্ণন থেকেই ঘুর্ণিঝড় গতিবেগ প্রাপ্ত হয়ে, ঘূর্ণাবর্ত তৈরি করে। এই ঘূর্ণাবর্তের কেন্দ্রে থাকে চক্রাকার চোখ, যা ক্রমাগত ঘুরতে ঘুরতে  ফানেলের মতো উপসাগরের দিকে মূল গতিমুখ প্রাপ্ত হয়, যার অনিবার্য গন্তব্য বাংলাদেশস্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলে তৈরি হওয়া সমস্ত ঘূর্নিঝড় বাংলাদেশের দিকেই ধাবিত হয়। অতীতে ও বর্তমানে অসংখ্য ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে। এরকম কিছু ঘূর্ণিঝড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়, আইন-ই- আকবরিরিয়াজ- উস- সালাতিন গ্রন্থে। ১৫৮২ সাল থেকে হিসেব করলে বড় বড় প্রায় ৭০ টির মতো ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।  তার মধ্যে কিছু আছে যা মানুষ ও প্রাণ সম্পদকে তছনছ করে দিয়েছে, পরিবেশকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতের সিডর, আইলার স্মৃতি আমাদের এখনো তাজা। কিন্তু ২৯ এপ্রিল, ১৯৯১ এর স্মৃতি ক্রমশ অপসৃয়মান। অথচ ২০ ফুটের অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস, ২০০ মাইল বেগে বাতাস সম্পন্ন মারিয়ান নামক এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার লোক মারা গিয়েছিলো। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি মারা গিয়েছিলো নারী ও শিশু। সে সাথে মারা গিয়েছিল ২লক্ষ ২৪ হাজার গরু-মহিষ, ২,১৮,০০০ ছাগল, ২৪ লক্ষ হাঁস-মুরগী। ২২ এপ্রিলে জন্ম নিয়ে মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় ঘূর্ণিঝড়টি এতটা তীব্রতা অর্জন করেছিলো যে মানুষের স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞানে এর প্রলয়ঙ্করী পরিসমাপ্তি সম্পর্কে কোন পূর্বাভাষই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নি। তাই ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত মানে কতটা বিপদের পুর্বাভাষ তা কেউ বুঝে ওঠতে পারে নি। বুঝলেও হয়তো কাজ হতো না। কারণ এই উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচার জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র ছিলো না। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ছিল  না, কোথাও হয়তো ভাঙ্গা বাঁধের চিহ্ন অবশিষ্ট ছিল। বাতাস যে কত তীব্রভাবে বইতে পারে তা যারা ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলা করে নি তারা বুঝতে পারবে না। বাতাসের ঝাপটায় পানির ফোঁটাগুলো বুলেটের মতো গায়ে লাগছিলোবৃষ্টির তীব্র থেকে তীব্রতর আঘাতে মানুষের গায়ের ত্বক পর্যন্ত ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিলো সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানে আমরা জানি, বৃষ্টি আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে, ওপর থেকে নিচে নামে। কিন্তু সেদিন বৃষ্টির জলীয় গতিবিদ্যা ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল। সেদিন বৃষ্টি নেমেছে আকাশ থেকে, বৃষ্টি ছুটেছে সমান্তরালে, কখনো মাটিতে জমা পানি অকস্মাৎ বৃষ্টি হয়ে উড়াল দিয়েছে আকাশে। সমস্ত প্রাণী ও জীবকূলের সে কি আর্তনাদ! বাদ যায় নি বৃক্ষরাও। ভয়াল রাতের লবণপানির প্রলয় কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য প্রাণ, উপড়ে ফেলেছে গাছ, ধ্বংস করেছে মানুষের সকল অবলম্বন। পরদিন সকালে সমস্ত উপকূলীয় জনপদই যেন পরিণত হয়েছিলো পতিত বধ্যভূমিতে। লাশের পর লাশ, পানিতে লাশ,গাছে লাশ, স্তুপে লাশ। কত মানুষ স্বজন হারানোর বেদনায় মুহ্যমান হয়েছে, এমন কি লাশ না পাওয়ার আক্ষেপে বুক চাপড়িয়েছে তার হিসেব নেই। আমার এক দাদা ( দাদার ভাই ) , সপরিবারে মারা গেলেন। তার নাম মৌলভী রহমত উল্লাহ, পেশায় মসজিদের ইমাম। থাকতেন মহেশখালী উপজেলার, কুতুবজোম গ্রামের নয়াপাড়ার দক্ষিণে। স্থানীয়ভাবে তখন এর নামও ছিলো দখিনা বিল। সেই বিলের বালির ঢিবিতে বাঁশঝাড়, পুকুর আর মাটির দেয়ালে টিনের চালা ঘরে উনি থাকতেন। সেদিন তার ছেলেপুলে, নাতি নাতনি সবাইকে নিয়েই বাসায় ছিলেন। পানি আসার সম্ভাবনা দেখে অনেকের মতই তিনি ঘরের চালে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু পানি এমনভাবে আসলো যে মূহুর্তেই দুটি বড় বাঁশঝাড় সমূলে উৎপাটিত হয়ে উল্টে ঘরের চালের ওপরে পড়লো। পানির তোড়ে মানুষ ও পশু এক সাথে ভেসে গেল। কোথায় সমাহিত হল তার হদিস মিলে নি। শুধু যে মহেশখালী, কুতুবদিয়া বা বাঁশখালিতেই প্রাণ হানি ঘটেছে তা নয়, বরং সমগ্র উপকূল জুড়েই হানা দিয়েছে প্রলয়লাশ জমেছে বেশুমার, তছনছ হয়েছে পরিবেশ, লণ্ডভণ্ড বাড়িঘর, পাল্টে গেছে উপকূলের ভূগোল। মহেশখালীর দক্ষিণে হামিদার দিয়া তো সাগরেই বিলীন হয়েছে। এরপর কখনোই উপকূলীয় পরিবেশ পূর্বের রূপ ফিরে পায় নি। কিছু কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রাণ-প্রজাতির নবায়ন ঘটে নি। বিশেষ করে মিঠা পানির মাছ। ১৯৯১ সালের পর উপকূলীয় অঞ্চলে পুকুর ভরা দেশীয় মাছের দেখা মেলে নি। এছাড়া বিলুপ্ত হয়েছে বাঁশঝাড় আর কেয়াবন

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী অবস্থা আরও বেদনাবিদূর, চারিদিকে কেবল আহাজারি আর হাহাকার তার ওপর ক্ষুধা, অন্ন-বস্ত্র-পানির অভাব, মৃতদের খোঁজা,লাশ উদ্ধার ও দাফনের তজিয়া। ঘূর্ণিঝড়ের পরে ডায়রিয়া এবং কলেরায় মারা গেছে প্রায় দুই হাজার লোক। সবকিছু মিলে আমরা চাই না এমন ভয়ানক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটুক। কিন্তু উপকূলীয় রক্ষাবাঁধ বা বেড়িবাঁধের অবস্থা এখনো নাজুক। উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীও ভূমিদস্যুদের গ্রাসে বিলীন প্রায়। নতুন করে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হয় নি। অথচ জনবসতি বেড়েছে বহুগুণ। উপকূলের অনিবার্য অনুষঙ্গ ঘূর্ণিঝড়তো আছেই, এর সাথে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজাত রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব। সার্বিকভাবে উপকূলীয় পরিবেশের ভৌত, অভৌত, জৈবিক-বস্তুগত পরিবর্তনের আর্থ-সামাজিক প্রভাব মারাত্মক রূপ নিতে শুরু করেছে উপকূলীয় সামুদ্রিক সম্পদও অতি ব্যবহারের কারণে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই উপকূলবাসীর সামগ্রিক সক্ষমতাও কমতে বসেছে। আমাদের এখন দরকার প্রাকৃতিক পরিবেশের নবায়নযোগ্য চক্রগুলো অক্ষুণ্ণ রাখা। কারণ প্রাকৃতিক পরিবেশের অনবায়নযোগ্য রূপান্তর ঘটলে আগেরমতো ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকবে না। এটাই সবচেয়ে শঙ্কার কারণ। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুর্নিঝড় মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত পূর্বপ্রস্তুতি নেয়ার সাথে সাথে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার অবকাঠামোগত উপকূলীয় উন্নয়ন হওয়া চাই। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, চিকিৎসাকেন্দ্র, যোগাযোগের রাস্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, পরিকল্পিত আবাসনের ব্যবস্থা, রেডক্রিসেন্ট, এনজিও, স্থানীয় স্কুল-কলেজ ও প্রশাসনের সমন্বিত তৎপরতার প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা থাকা বাঞ্ছনীয়।

কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে এসব নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক জোটের সাথে দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক প্রটোকল বাস্তবায়নের সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমান বিশ্বগ্রামের যুগে কোন দেশ এককভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও প্রভাব মোকাবেলা করতে পারে না। কার্বন নিঃসরণ , হিমালয়ের পানির উৎস ,অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা, জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী ও দুরবর্তী দেশের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলার কৌশলের সাথে এসব বিষয়ের যৌক্তিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য সারা পৃথিবীতেই দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বলয়ের মিশ্র সম্পর্ক দেখা দিয়েছে, যাকে অর্থনীতিবিদ জগদীশ ভগবতী নুডলস বাওয়েল প্রপঞ্চ বলেছেন। এক বাটি নুডলসে যেমন নুডলসগুলো এলোমেলো সম্পর্কজঠে আবদ্ধ থাকে, তেমনি আন্তর্জাতিক চুক্তি, আঞ্চলিক চুক্তি ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মধ্যে পরস্পরবিদারী আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। তাই এসব জোটের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থতাড়িত অগ্রাধিকার ও চুক্তির মধ্যে একটি সমন্নয় করতে না পারলে, আর নিজেদের স্বার্থে সিদ্ধান্তগুলোতে ইনপুট দিতে না পারলে, কার্যকর অর্থে আমরা উদ্ধারহীন ভোগান্তিতে পড়ব। আন্তর্জাতিক জোটের সিদ্ধান্তগুলোতে শক্তিমানের স্বার্থ রক্ষিত হয়। এখানে একটা ভারসাম্য আনার জন্য দরিদ্র দেশসমুহ আলাদা জোট করে থাকে, তবুও তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনাতাই আমাদের দরকার, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা ও জনমত তৈরির জন্য ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও মানবিক বিপর্যয়ের ইস্যুগুলো তুলে ধরা। এভাবেই হয়তো আমরা ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য কাম্য সক্ষমতা অর্জন করতে পারব।    

     

Comments

Popular posts from this blog

মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার

সরওয়ার কামাল শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় ভালো, যা সম্পর্কে প্রশংসা করে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রবন্ধ লিখেছেন “ ল্যানসেট ” নামক মেডিক্যাল জার্নালে। কিন্তু এতে আমাদের বগল বাজিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়া এবং বিজ্ঞান শিক্ষা সংকুচিত হয়ে পড়া আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণে আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্যগুলো হাসিল হচ্ছে না, যার একটি হলো সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, অপরটি হলো শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা। অর্থাৎ সব শিশুই যাতে সরকারের সুযোগ ব্যবহার করে উন্নত জীবনের সন্ধান করতে পারে, তার শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, তার মধ্যে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রধান কারণ দারিদ্র্য ও অপুষ্টি বা স্বাস্থ্যহীনতা । মাধ্যমিক পর্যায়েও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে দারিদ্র্য সমস্যার ...

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনা জালে

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনা জালে ............................................................................... সাম্প্রতিক কালে আমাদের নৈতিক উপলব্ধিতে, সামাজিক উদ্বেগে কিংবা মূল্যবোধে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। প্রযুক্তির নিবিড় ব্যবহার, বিশ্বায়নের প্রভাব, বিশ্বরাজনীতির অভিঘাত, বাজার সংস্কৃতির ধাক্কা ও চরমপন্থী ভাবাদর্শের টানাপড়েনে আমাদের চিরকালীন মূল্যবোধ ভেঙ্গে পড়েছে। নৈতিকতার সীমানা সরে যাচ্ছে প্রথাগত বিশ্বাস ও প্রতিষ্ঠানসংলগ্নতা থেকে। গতিময় জীবনের অভিঘাতে চরম অস্থিরতা ব্যক্তি থেকে ব্যষ্টির ব্যাপ্তিতে বিরাজ করছে। সর্বত্র আহাজারি, শোনার অবসর নিয়ে হাজির নেই কেউ। মানুষ যে নির্বিকার তাও নয়, তারা বিকারগ্রস্থ, পূর্ণমাত্রায় ঘোরগ্রস্থ, কেবল অপ্রত্যাশিত ঘটনাপ্রবাহের সাথে তাল মেলানোতে। তারা এখন এমন সব বিষয়ে আলোড়িত হয়, যে বিষয়ের সাথে তাদের সরাসরি যোগ নেই। থাকলেও তা অনেক ক্ষীণ ও দূরবর্তী কার্যকারণ সম্পর্কে আবদ্ধ। একইভাবে, তারা এমন সব পরিণতি ভোগ করে, যার জন্য তারা নিজেরা দায়ী নয়। আর যারা দায়ী তারা এর পরিণতি ভোগ করেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ বয়সের দিকে এই প্যার...

মহেশখালীর সমাজ ও সংস্কৃতি

সরওয়ার কামাল সাগর কূলে গিরিকুন্তলা মোহিনী মহেশখালী দ্বীপের ৩৮৮ বর্গকিলোমিটার ভূত্বকে প্রায় পাঁচ লক্ষ লোকের বসতি। তাদের বসতি ঘিরে গড়ে উঠেছে উপকূলীয়-দ্বীপাঞ্চলীয় সমাজ। এই সমাজসভ্যদের মানসিক ঐক্য ও জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হয়েছে শনাক্তযোগ্য বিশেষ স্থানীয় সংস্কৃতি। মানবজাতির চিরকালীন অভিযাত্রার অংশ হিসেবে দেশের নানা জায়গা থেকে হিজরত করে লোকজন এসে বসতি গেড়েছে মহেশখালীতে। তাই তাদের ভাষা ও আচরণে শনাক্ত করা যায় এমন বৈচিত্র্য ও তারতম্য, যা দিয়ে কক্সবাজারের অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের তুলনায় মহেশখালীবাসীকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করা যায়। যে পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ঠ্যাবলী নিয়ে মহেশখালীর সমাজ ও মানুষের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য তৈরি হয়েছে, চাটগাঁইয়া ভাষার উপভাষাতুল্য মহেশখালীর দ্বীপাঞ্চলীয় বুলি তার মধ্যে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। [1] তবে সমস্যা হলো, লিখিত সাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অভাবে স্থানীয় ইতিহাসের মতোই কালিক সূচকের নিরিখে এর জনসংস্কৃতি বর্ণনা করা দুরূহ। একেতো সংস্কৃতি স্বয়ং একটি ব্যাপক ধারণা, তদুপরি, এটি সতত পরিবর্তনশীল। ভাষা ও সংস্কৃতি স্রোতস্বী নদীর মতো বহমান। মানুষের কথা, স্মৃতি, পুরা...